দেশে প্রয়োজনের বেশি ধান চাষ হচ্ছে : কৃষিমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:০৯ পিএম, ১৮ মে ২০১৯

কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ধানের দাম অস্বাভাবিকভাবে কম হলেও দ্রুত এর সমাধান কঠিন। এ সংকট নিরসনে সীমিত পর্যায়ে চাল রফতানির চিন্তাভাবনা করছে সরকার।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে কৃষিখাত। তবে নানা সমস্যা থাকার পরও বাংলাদেশে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হচ্ছে।

শনিবার রাজধানীর আইইডিবি সম্মেলন কক্ষে ‘জলবায়ু পরিবর্তন : কৃষি খাতের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইডিবি), কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের (বিসিজেএফ) যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।

আইডিইবির সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমানের সভাপতিত্বে ও বিসিজেএফ সভাপতি কাওসার রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. খলীকুজ্জামান আহমদ।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, সারাদেশ থেকে চাষীদের নির্বাচন করা কঠিন বলেই সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে কৃষি খাতে বিপ্লব হয়েছে। এটা খারাপ দিক না। এটা নিয়ে হতাশারও কিছু নেই। ফ্রান্সের মতো বাংলাদেশেও চাষীরা ড্রাম ভর্তি দুধ রাস্তায় ফেলে দেয়, ট্রাক ভর্তি টমেটো নিয়ে হাইওয়েতে ফেলে দেয়। কৃষি একটা স্পর্শকাতর সেক্টর। আমরা তো সব সময় চাই খাবারের দাম কম থাকুক, চালের দাম কম থাকুক। বাংলাদেশে অধিক ধান উৎপাদন এখন বিড়ম্বনা হয়ে দেখা দিয়েছে। ধান চাষ উদ্ধৃত্ত হয়েছে।

ধানের দাম কম হওয়ায় ধান ক্ষেতে আগুন দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দু-একজন ভাবাবেগ হয়ে ধান ক্ষেতে আগুন দিয়েছে। সারাদেশে ওইভাবে আগুন দিচ্ছে না। আমি মনে করি মানুষ দায়িত্বশীল, তারা নিজের ক্ষেতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলবে, এটা কোনদিনও হতে পারে না।

তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই কৃষিকে আধুনিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণ- এ তিনটির মাধ্যমে এখন যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে সে সমস্যার সমাধান অবশ্যই করবো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য করণীয় সম্পর্কে নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখছেন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

সেমিনারে উৎপাদনশীলতার পাশাপাশি গুদাম বাড়ানো এবং ধানের দাম নিয়ে সংকট সমাধানে স্থায়ী কমিশন গঠনের পরামর্শ দেন ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ। কৃষিকে আধুনিকীকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে সম্প্রতি দেশব্যাপী ধানের মূল্য হ্রাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ধান ও গমসহ বার্ষিক উৎপাদন সাড়ে তিন কোটি টন। সরকারের গুদামজাতকরণের ক্ষমতা রয়েছে ২০/২২ লাখ টন। তার মধ্যে গত বছর কেনা ১০ লাখ টনের বেশি কেনা ফসল রয়ে গেছে। সুতরাং যতদিন পর্যন্ত কৃষকের কাছ থেকে সব ধান চাল কিনে মজুদ করা সম্ভব না হয়, ততদিন কৃষককে উপযুক্ত দাম দেয়া সম্ভব হবে না।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিদ্যমান (ধানের দাম কম) সমস্যা সমাধানে আপাতত সমাধান হলো বিদেশের বাজারে রফতানি। তবে বাংলাদেশে বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই কোনো কারণে আমন ধান নষ্ট হলে খাদ্য ঘাটতির ঝুঁকি তৈরি হবে। এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হচ্ছে। বিভিন্ন ঝুঁকি বিবেচনার পরও সীমিত পর্যায়ে রফতানির চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, রফতানির বাজারে যাওয়াও কঠিন। এছাড়া রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে রফতানি করতে হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিজেএফ সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিসিজেএফ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রসূন আশীষ ও কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক ড. মো. নুরুল ইসলাম । আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাবেক কৃষি সচিব ড. আনোয়ার ফারুক, চ্যানেলআইয়ের রফিকুল বাসার, চ্যানেল-২৪ এর জোবায়ের আল মাহমুদ ও কোষ্ট ট্রাস্ট বিডির মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

এমইউ/এমএসএইচ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।