আবারো সক্রিয় হচ্ছে কালাইয়ের কিডনি পাচারকারী চক্র


প্রকাশিত: ১২:০৩ পিএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কিডনি ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত চক্রটি। গত ৩ মাসে এ উপজেলার আরো ৮ জন জেলার বাইরে গিয়ে তাদের কিডনি বিক্রি করে এসেছেন। এলাকারবাসীর অভিযোগ যারাই কিডনি বিক্রি করছে তারাই ওই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে।

ইতোমধ্যে এ উপজেলার বেশ কিছু গ্রাম কিডনি বিক্রির গ্রাম হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। গ্রামগুলো হলো, উপজেলার বহুতী, জয়পুরবহুতী, ঝামুটপুর, ভেড়িন্ডি, রাঘবপুর, গোড়াই, সিমরাইল, উলিপুর, কুসুমপাড়া, বিনইল, নোওয়ানা, দুর্গাপুর, দুধাইল নয়াপাড়া, বোড়াই ও উত্তর তেলিহা। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি গ্রামে রয়েছে এই চক্র।
kidny
এসব গ্রামের জনপ্রতিনিধি ও গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিডনি বিক্রেতা ও দালালরা তাদের কৌশল পাল্টে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠছে।

ঠিকানা পরিবর্তন করে এসব গ্রামের অনেকেই ২ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে দালালদের মাধ্যমে কিডনি বিক্রির জন্য ঢাকা, ভারত ও সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে ছুটছেন।

দালালদের ফাঁদে পড়ে ৩ মাস আগে কিডনি বিক্রি যারা করেছেন তারা হলেন, তেলিহার গ্রামের জলিল ফকিরের মেয়ে মুক্তি বেগম, আব্দুস সামাদের মেয়ে মনোয়ারা হোসেন মুন্নু, তোফাজ্জলের মেয়ে মিনা বেগম ও নয়াপাড়া গ্রামের দেলোয়ারের স্ত্রী ও কাবেজ আলীর ছেলে খাজা মিয়া।

কিডনি বিক্রি করা বহুতী গ্রামের মোকারম ও মোশারফ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, শরীরের অতি মূল্যবান অঙ্গ বিক্রি করে আমরা যে ভূল করেছি, তা সারাটা জীবনেও শোধরাবার নয়।
kidny
বহুতী গ্রামের ৬৫ ঊর্ধ্ব সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেকেই ঢাকা ও সিলেটে রিকশা চালাতে ও গার্মেন্টেস এ চাকরি করার কথা বলে গেলেও দুই থেকে তিন মাস পর এসেই তারা জমি কেনেন কিংবা বাড়ি বানান। আর এরপরই কিডনি বিক্রেতার শারীরিক পরিবর্তনই ধরা দেয় গ্রামবাসীদের মধ্যে।

উদয়পুর ইউনিয়নের নয়ন চৌধুরী বলেন, যারা কিডনি বিক্রি করে তারাই পরবর্তীতে দালাল হিসেবে কাজ করে। উত্তর তেলিহারসহ আরও দুই থেকে তিনটি গ্রামের একাধিক নারী-পুরুষ গত কয়েক মাসে দালালদের মাধমে কিডনি বিক্রি করেছেন। এখনও ৮-১০ জন নারী-পুরুষ গ্রাম ছাড়া।

আহম্মেদাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খয়ের গোলাম মওলা বলেন, কিডনি বিক্রেতাদের সনাক্ত করা বড় কঠিন। একমাত্র জামার কাপড় তুলে দেখা ছাড়া বুঝা যায়না। গত ৩ বছরে কিডনি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৩১ জনের বিরুদ্ধে চারটি মামলা হলেও সবাই জামিনে বের হয়ে পলাতক রয়েছেন। আবার কেউ কেউ বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং কিডনি পাচার চক্রের হোতা হিসেবে কাজ করছেন।
kidny
বর্তমানে কিডনি বিক্রির সঙ্গে জড়িত দালালরা হলেন, বিনইল গ্রামের ফজলু ইসলামের ছেলে অহেদুল ইসলাম, আজিজুল ইসলামের স্ত্রী যমুনা বেগম, আতিকুল, আজিজুল এবং জয়পুর বহুতি গ্রামের ইসহাক হোসেনের ছেলে মান্নান হোসেন, মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে মোশারফ হোসেন, উত্তর তেলিহার গ্রামের মৃত ঠান্ডা মিয়ার ছেলে মানিক হোসেন, লোকমান সরকারের ছেলে সাগর সরকার, উনিহার গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে সুলতান হোসেন, আব্দুস ছাত্তার ও মোজাহার। এছাড়াও আরো কয়েকজন রয়েছেন।

২০১১ সালে কিডনি বিক্রির খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে ওই বছরের ২৯ আগস্ট কিডনি বিক্রেতাদের মূল হোতা ও চিহিৃত দালাল আঃ ছাত্তারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে প্রথমে মামলা হয় কালাই থানায়। এরপর বিভিন্ন সময় তাদের গ্রেফতার করা হলে কিডনি বিক্রি চক্রের সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে তারা জবানবন্দিও দেয়। এদের অনেকে ঢাকার নামকরা একাধিক হাসপাতাল ও স্বনামধন্য চিকিৎসকের জড়িত থাকার কথা আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে স্বীকার করেন। কিন্ত প্রকৃত আসামিদের বাদ দিয়ে ২০১২ সালে দায়সারা অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন তৎকালীন কালাই থানা পুলিশের এসআই নুর হোসেন। এরপর ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বহুতি গ্রামের আলোচিত আব্দুস সাত্তারসহ ৮ কিডনি বিক্রেতার বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা করা হলেও সবাই জামিনে মুক্ত হয়ে আসেন।
kidnyসর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ আগস্ট উত্তরাঞ্চলের কিডনি পাচারচক্রের মূল হোতা বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ মোল্লার ছেলে সাইফুল ইসলাম দাউদসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলে ২০ আগস্ট দাউদকে ঢাকা বারডেম হাসপাতাল থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরবর্তীতে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিন মাস আগে পুরান ঢাকার একজনের কাছে কিডনি বিক্রি করা কালাই উপজেলার কুসুমসাড়া গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে গোলাম মোস্তফাকে গ্রেফতার করে কালাই থানা পুলিশ। বর্তমানে তারা দুইজন জেল-হাজতে।

কালাই থানা পুলিশের ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, গ্রামবাসীকে সচেতন করতে জয়পুরহাট জেলা পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যেই কিডনি বিক্রির কুফল সম্বলিত লিফলেট গ্রামে-গ্রামে বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া কিডনি বিক্রি চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করতে মামলা রুজু হয়েছে। অতিসত্ত্বর আমরা তাদের আইনের আওতায় আনতে পারবো।
 
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র হাওলাদার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা গ্রামবাসীকে সচেতন করছি। বিভিন্ন মিটিংয়ের মাধ্যমে এবং কারো বিরুদ্ধে এই রকম অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।