গরু মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত হচ্ছে হরমোন ইনজেকশন
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অধিক মুনাফার আশায় কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে গরু মোটাতাজা করছেন। অসাধু খামার মালিক এবং এক শ্রেণির দালাল কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে রোগাক্রান্ত বা শীর্ণকায় গরু কিনে ওষুধ প্রয়োগ করে মোটাতাজাকরণ করছেন। আর গরু মোটাতাজা করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত হরমোন ইনজেকশন এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ।
জানা গেছে, আগে যে কাজটি গোপনে করা হতো এখন কথিত পশু চিকিৎসকদের মাধ্যমে প্রকাশ্যেই কাজটি করা হচ্ছে। কয়েক যুগ আগেও গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে গরু কিনে কোরবানি দেয়া হত। এখন খামারি ও কৃষকরাও গরু মোটাতাজাকরণের কাজটি করছেন। আর কোরবানির চাহিদার ৮০ ভাগ পশুই দেশের কৃষক এবং খামারিরা যোগান দিচ্ছেন। বাকি অংশ কোরবানির আগে বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে।
তবে আমদানির সিংহভাগ পশুই ভারত থেকে এসে থাকে। গত কয়েক বছর ধরেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কৃত্রিমভাবে গরু মোটাতাজা করে আসছে। তবে অনেকেই এই অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেন না বলেও জানিয়েছেন। এ পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজকরণে দুই বা তিন মাসের মধ্যেই জবাই না করলে মারা যায়। অনেক সময় এ সকল পশু বিক্রির জন্য বাজারে নেয়ার পরও মারা যায়। কারণ স্টোরয়েড নামে হরমোন গরুর দেহের পরতে পরতে মিশে যায়।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা রোডের এক ওষুধ ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে জানান, বিশেষ করে রোজার ঈদের এক মাস আগে থেকেই গরু মোটাতাজাকরণ ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। কারণ বিভিন্ন গবাদি পশুর চিকিৎসকরা এবং খামারিরা এ সকল ওষুধ ক্রয় করে থাকেন। এছাড়া যাদের বাড়িতে কয়েকটা গরু রয়েছে তারাও এ সকল গরু মোটাতাজাকরণের ইনজেকশন প্রয়োগ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, স্টোরয়েড মূলত হাঁপানি রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ জাতীয় ওষুধ ডেক্সামেথারসন, ডেকাসন, বেটামেথার্সন, পেরিঅ্যাক্টিন পশুর কিডনি ও যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট করে ফেলে। পানি শরীর থেকে বের হতে দেয় না। এই পানি গরুর মাংসে চলে যায়। যার কারণে গরু মোটা দেখা যায়।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. মুস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে স্টোরয়েড নামে ওষুধ ব্যবহার করে কেউ কেউ গরু মোটাতাজা করছে। এতে গরুর যেমন লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি এগুলো খেলে মস্তিস্ক ক্ষতিগ্রস্তসহ নানা রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
কুষ্টিয়া জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, খামার মালিকদের স্টোরয়েড ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বোঝানো হচ্ছে। শরীরে বিষাক্ত রাসায়নিক আছে কিনা বাজারে তোলার আগে তা বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবেন।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা, পোড়াদহ, বিত্তিপাড়া, আলামপুর, ভাদালিয়া, মাজিরহাট, দহকুলাসহ বিভিন্ন এলাকার খামারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এ সকল এলাকায় মোটাতাজাকরণের ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, গরু মোটাতাজা করার জন্য মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ বাজার থেকে কারা কিনছেন সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। ইতোমধ্যেই সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়ার এবং কঠোর নজরদারি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত কয়েক দিন ধরে কুষ্টিয়া শহরস্থ চৌড়হাস, উপজেলার মোড় এবং কলেজ মোড় এলাকায় বিভিন্ন ফার্মেসিতে অবৈধভাবে গরু মোটাতাজাকরণের ওষুধ, ইনজেকশন, পাউডার এবং অনুমোদনবিহীন ভিটামিন বিক্রয়কারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম জামাল আহমেদ, উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. দীনবন্ধু এবং কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।
আল-মামুন সাগর/এসএস/পিআর