ক্ষেতে আগুন দেওয়া সেই কৃষকের ধান কিনবে স্বপ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:২৪ পিএম, ১৩ মে ২০১৯

টাঙ্গাইলে ধানের দাম কম ও দিনমজুর না পাওয়ায় ধানক্ষেতে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদকারী কৃষক আব্দুল মালেক সিকদারের ধান কিনে নেবে সুপারশপ স্বপ্ন। রোববার জাগো নিউজে প্রকাশিত 'ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিলেন কৃষক' শীর্ষক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এ উদ্যোগ নিয়েছে স্বপ্ন। ইতোমধ্যে জাগো নিউজের মাধ্যমে আব্দুল মালেক সিকদারের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে তারা।

সুপারশপ স্বপ্নের হেড অব মার্কেটিং তানিম করিম বলেন, কৃষকের খবরটি জাগো নিউজের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তা স্বপ্ন এর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসিরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। স্বপ্ন জাগো নিউজের মাধ্যমে সেই কৃষকের মোবাইল নম্বর নেয় এবং সাব্বির নাসিরের তাৎক্ষণিক নির্দেশে সেই কৃষকের সাথে স্বপ্ন- এর বিজনেস হেড খালিদ হাসান মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন।

তিনি আরও বলেন, আব্দুল মালেক সিকদারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে। আমরা তার ১২৮ শতাংশ জমির ধান কিনে নেব। ধানের সরকার নির্ধারিত মূল্য মণ প্রতি ৫০০ টাকা হলেও আমরা ওই জমির ধান ৬৪০ টাকা থেকে ৬৬০ টাকা মণ হিসেবে কিনবো।

তানিম করিম আরও বলেন, আব্দুল মালেক সিকদারের সঙ্গে বলার পরে স্বপ্ন- এর চালের সোর্সিং টিম এখন টাঙ্গাইলের পথে আছে। তারা তার সঙ্গে দেখা করে ধান কিনে নেবে।

এর আগে জাগো নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়- ধানের দাম কম হওয়ায় ক্ষেতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন ওই কৃষক। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের আব্দুল মালেক সিকদার তার রোপণকৃত ধানে আগুন ধরিয়ে এমন প্রতিবাদ জানান।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদরসহ ১২টি উপজেলায় এবার বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে।

বাকি ৭০ শতাংশ কিন্তু ধান পেকে গেলেও কৃষক দিনমজুরের অভাবে ঘরে তুলতে পারছে না। দিন প্রতি একজন দিনমজুরকে দিতে হয় ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা। আর বর্তমান বাজারে ধানের মূল্য ৫০০ টাকা মণ। এতে প্রায় দুই মণ ধান বিক্রি করে কৃষক একজন দিনমজুরকে (কামলা) মজুরি দিতে হচ্ছে। আবার অধিক মজুরি দিয়েও দিনমজুর পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে জমিতে পড়েই নষ্ট হচ্ছে পাকা ধান।

কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া ইউনিয়নের বানকিনা গ্রামের কৃষক আব্দুল মালেক সিকদার বলেন, মণ প্রতি ধান কিনতে ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। ধান কাটতে দিনমজুরকে দিতে হচ্ছে প্রায় এক হাজার টাকা মণ প্রতি। এরপরও ধান ঘরে তুলতে আরও খরচ। অন্যদিকে বেশি মজুরি হলেও কামলা পাওয়া যায় না। ক্ষেতে ধান পাকলেও তা ঘরে তুলতে পারছি না। তাই এক দাগের ৫৬ শতাংশ ধানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছি।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এই সময়ে ধানের বাজার কিছুটা কম থাকলেও কৃষক যদি ধান সংরক্ষণ করে রাখে তবে কয়েকদিন পরই অধিক মূল্য পাবে। দাবদাহসহ নানা কারণে কিছুটা শ্রমিক সংকট থাকলেও তা তীব্র নয়। জেলায় গত বছরের তুলনায় এবার ব্যাপক পরিমাণ বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ১ লাখ ৭১ হাজার ৭০২ হেক্টরের ধানের প্রায় ৩০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে শ্রমিকদের অধিক মজুরি দিতে হয় এটা সত্য।

উল্লেখ্য, নিজের সন্তানের জন্য সুপারশপ স্বপ্ন থেকে খাবার দুধ নিয়ে পালানো এক বাবাকে ইতোমধ্যে সোর্সিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে স্বপ্ন। রোববার (১২ মে) সুপারশপটির পরিচালক সাব্বির নাসির স্বপ্ন’র প্রধান কার্যালয়ে তার হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেন।

এআর/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।