‘মিসফায়ারে’ ধরা ছিনতাইকারী চক্র!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:৩৩ পিএম, ১০ মে ২০১৯

চলতি বছরের ২৩ মার্চ, দুপুর ১টা। গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চের পাশের ফুটপাতে পড়া ছিল দুজন। আশপাশের লোকজন সামনে গিয়ে দেখেন, দুজনই গুলিবিদ্ধ ও রক্তাক্ত। এরপর তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।

তাদের একজনের নাম সুজা উদ্দিন তালুকদার, অপরজন জাহিদুল ইসলাম সোহাগ।

প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদের কাছে দায়িত্বরত পুলিশ জানতে চান, আসলে কী ঘটেছিল? দুজনেরই দাবি, তারা ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন। ছিনতাইকারীরা তাদের গুলি করে পালিয়ে যায়।

যেহেতু বঙ্গভবনের পাশের ঘটনা, তাই গুরুত্বসহকারে তদন্ত শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে আসল রহস্য। হাসপাতালে ভর্তি সুজা উদ্দিন তালুকদার ও জাহিদুল ইসলাম সোহাগের পরিচয়ও সামনে চলে আসে।

তদন্তে ডিবি জানতে পারে যে, সুজা উদ্দিন সত্যি সত্যিই সেদিন ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েছিলেন। তিনি নাভানা গ্রুপের নির্বাহী কর্মকর্তা। গুলি খাওয়া অপরজন সোহাগ ছিনতাইকারী। সোহাগের ‘ছিনতাইকারী সহকর্মী’র ছোড়া গুলিতে তিনি আহত হন! গুলি খাওয়ায় সোহাগকেও ভয়ে উদ্ধার করেনি তার সহকর্মীরা। তাকে রেখেই পালিয়ে যায়।

এরপর ছিনতাইকারী চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে মাঠে নামে ডিবি।

১৮ এপ্রিল উত্তরার খালপাড় এলাকায় ঘটে একই ধরনের ঘটনা। সিরাজ নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় সাত লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় একটি ছিনতাইকারী চক্র। ছিনতাইয়ের সংবাদ শুনে উত্তরা পশ্চিম থানায় যায় ডিবি। তবে থানায় কোনো মামলা পায়নি তারা। অজ্ঞাত কারণে ওই ঘটনায় মামলা না নিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেয় পুলিশ। জিডির ভিত্তিতে চলে নতুন করে তদন্ত।

উত্তরার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখে একজনকে গ্রেফতার করে ডিবি। আগে গ্রেফতার হওয়া সোহাগের সামনে হাজির করা হয় তাকে। মুহূর্তেই সোহাগ তাকে চিনে ফেলেন।

তাদের দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে একে একে গ্রেফতার করা হয় ছিনতাইকারী চক্রের আরও চার সদস্যকে। সোহাগ ছাড়া বাকি পাঁচজন হলেন- মিজান ওরফে ডেমরা মিজান, সোহাগ, রাসেল, স্বপন ও বারেক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় গত ২৩ মার্চ দুপুরে সংঘটিত ছিনতাইয়ের আসল ঘটনা।

আসামিরা জানায়, গত ২৩ মার্চ রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চের কাছে ব্যাগভর্তি টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে মিজান ও সোহাগ নামের দুই ছিনতাইকারী। আশপাশে ওই চক্রের আরও দুই সদস্য সে সময় উপস্থিত ছিল।

miss-fire-02

নাভানা গ্রুপের নির্বাহী কর্মকর্তা সুজা উদ্দিন টাকা নিয়ে নবাবপুরের দিকে যাওয়ার পথে আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা ছিনতাইকারীরা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সুজা উদ্দিন মাটিতে পড়ে যান। এ সময় আশপাশের লোকজন ধর ধর বলে চিৎকার দিলে চক্রের সদস্য মিজান গুলি চালায়। সুজা উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হলেও ভুলক্রমে একটি গুলি গিয়ে লাগে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য সোহাগের পায়ে। পরে নিরুপায় হয়ে সোহাগকে রেখে মিজান পালিয়ে যায়।

এরপর ‘কেঁচো খুঁড়তে’ বেরিয়ে আসে ‘বিষধর সাপ’। আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, তারা একটি মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে ছিনতাই করতো। চক্রের মূলহোতা আবদুল হকের সঙ্গে পল্টনের জাতীয় বধির স্কুলের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ ছিল। তাই তিনি রেন্ট-এ কারে কখনও বধির স্কুলের স্টিকার, কখনও ‘ডিবি’ ও ‘র‌্যাবের’ স্ট্রিকার লাগিয়ে ছিনতাই করতো।

ছিনতাইয়ের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তারা জানান, কয়েকটি গ্রুপে ভাগ হয়ে তারা ছিনতাই কার্যক্রম পরিচালনা করতো। একটি গ্রুপ ব্যাংক ও আর্থিকপ্রতিষ্ঠান থেকে টাকা তুলে বের হওয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য দিত। আরেক গ্রুপ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে সুযোগ বুঝে ছিনতাই করতো।

সর্বশেষ তারা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক থেকে একটি গরুর ট্রাক থেকে গরু ছিনতাই করে। মহাসড়কে তারা প্রায়ই এসএ পরিবহনের কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়ি টার্গেট করে।

এ বিষয়ে ডিবি পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ও তদন্তের তদারকি কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম বলেন, আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে যে, ব্যাংক থেকেই তারা একজন গ্রাহককে টার্গেট করে। ওই গ্রাহক ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পর তারা তাকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এরপর সর্বস্ব লুট করে নির্জন স্থানে তাকে ফেলে দেয়া হয়।

ওই চক্রের সঙ্গে সাত থেকে আটজন জড়িত। সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী। তাদের গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

এআর/এমএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।