রাবিতে সান্ধ্যকোর্সের নামে হচ্ছেটা কী!


প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ব্যবসায়, আইন অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের পর এবার সান্ধ্যকোর্স চালু করা হচ্ছে প্রকৌশল অনুষদে। শুরু থেকেই একের পর এক অনুষদগুলোতে সান্ধ্যকোর্স চালু হওয়ায় বিষয়টি নেতিবাচকভাবেই দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তারা মনে করেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বাণিজ্যিক শিক্ষা পদ্ধতি সান্ধ্যকোর্স চালু হয়েছে তা দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়কে শেষ করে দিবে। একসময় এখানে শিক্ষার কোনো বালাই থাকবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি আলমগীর সুজন জাগো নিউজকে বলেন, এই সান্ধ্যকোর্স শিক্ষার নামে ব্যবসা শেখায়। এইভাবে সান্ধ্যকোর্স চালু করে দিনের পর দিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হচ্ছে।  

ছাত্র ফেডারেশনের রাবি শখার সভাপতি ফারুক ইমন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা প্রথম থেকেই এই বাণিজ্যিক সান্ধ্যকোর্সের বিরোধিতা করে আসছি। তারপরও প্রশাসন সান্ধ্যকোর্স বন্ধ না করে একের পর এক অনুষদে তা চালু করে চলেছে। ধীরে ধীরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রূপ নিচ্ছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে। সান্ধ্যকোর্স বন্ধের বিষয়ে তিনি প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এভাবে একের পর এক সান্ধ্যকোর্স চালু করলে আমরা আবারো ২ ফেব্রুয়ারির আন্দোলনে যাবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসের বলেন, আমি শুরু থেকেই সান্ধ্যকোর্সের বিরোধিতা করি। তবে সমসস্যা হলো অধিকাংশ শিক্ষকই এর পক্ষে। তবে দেশের প্রতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দায়িত্ব তা এই সান্ধ্যকোর্স দিন দিন অবহেলার দিকে ধাবিত করছে। শিক্ষকরা নিয়মিত শিক্ষার্থীদেরকে সুষ্ঠু পাঠ না দিয়ে টাকার বিনিময়ে অন্যদের শিক্ষা দিচ্ছেন। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস পাচ্ছেন বলেও মনে করেন তিনি।

গত ২৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের  ২৩৮তম  সভায় প্রকৌশল অনুষদের মোট ৫টি বিভাগে এ কোর্স চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে রাবিতে ২০০৮ সালে ব্যবসায় অনুষদ, ২০১০ সালে আইন অনুষদ এবং ২০১৪ সালে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সকল বিভাগে সান্ধ্যকোর্স চালু করা হয়।

প্রকৌশল অনুষদ সূত্রে জানা গেছে, এ অনুষদে মোট বিভাগ রয়েছে পাঁচটি। বিভাগগুলো হলো, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে চূড়ান্তভাবে পাশ হওয়ার পর এসব বিভাগে যেকোনো সময় চালু করা হবে সান্ধ্যকোর্স। অনুষদের নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে বিভাগের সভাপতিরা তা চালু করতে পারবেন।

বিশ্বব্যিালয়ের প্রকৌশল অনুষরে ডিন অধ্যাপক আবু বকর মো. ইসমাইল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার পর এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের ২৩৮ তম সভায় প্রকৌশল অনুষদে সান্ধ্যকোর্স চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এখন এ অনুষদে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতিরা চাইলে যে কোনো সময় তা চালু করতে পারবেন।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাইভেটাইজেশন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভাজন সৃষ্টি করা হচ্ছে এমন দাবিতে সকল বিভাগে সান্ধ্যকোর্স বন্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের। কিন্তু তারপরও ২০১৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সকল বিভাগের সান্ধ্যকোর্স চালুর বিষয়ে প্রশাসন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর আন্দোলনে নামে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। সান্ধ্যকোর্স বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে ২ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ। তাদের গুলি ও বারাব বুলেটে আহত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় একাধিক শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলাও করা হয়।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।