হজ ও ওমরায় সেলফি নয়
সেলফি নিয়ে মানুষের ভাবনার যেন শেষ নেই। মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে দিনমজুর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে এ সেলফির ব্যবহার। সর্বোপরি যে জিনিসটি বর্তমানে বেশি আলোচিত, সমালোচিত তা হচ্ছে ইসলামের সর্ববৃহৎ ইবাদত হজে সেলফির ব্যবহার। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে মহাবিতর্ক। কিন্তু ইসলামি শরীয়াহতে এর অনুমতি আছে কি না এ নিয়ে চলছে বিতর্ক। ঝড় বইছে ইসলামি দুনিয়ায়।
হজে সেলফি নিয়ে কিছু মতামত তুলে ধরা হলো :
হজে সেলফি :
হজ মানুষের জন্য সারা জীবনে একবার ফরজ। হজের স্মৃতিকে ধারণ করার জন্যই এই সেলফি। তাছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফোন না করে সেলফি তুলে তা নেট মাধ্যমে পোস্টের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনদের নিকট নিজের অবস্থান তুলে ধরা। হজের মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখার উপায় সেলফি। এ হচ্ছে হজে আসা তরুণদের অভিব্যক্তি। ইসলামি চিন্তাবিদগণ অপ্রয়োজনে হজ ও ওমরাহর সময় সেলফি না তুলতে আহবান জানিয়েছে। তারা সেলফি তোলাকে ‘পর্যটকসুলভ আচরণ’ বলেও সমালোচনা করেছেন।
পাশাপাশি ইবাদতের সময় সেলফি তোলা নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠাকে ভালো চোখে দেখেননি হজ করতে আসা অনেকেই। কাবা শরিফের আশপাশে সেলফি তুলতে থাকাদের নিরুৎসাহিত করতে অনেক আলোম বলেন যে, ‘ইবাদতে মনোযোগী হোন! এখানে সেলফি নয় ইবাদতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’ সেলফির বিষয়ে অনলাইন আরব নিউজে ‘সে নো টু হাজ সেলফি’ অর্থাৎ ‘হজের সময় সেলফিকে না বলুন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদনে হজে সেলফির আগ্রাসন বন্ধের আহবান জানিয়েছেন।
সেলফি হজের হক পালনে বাধা:
হজের সময় মসজিদ আল-হারামে কাবার সামনে দাঁড়িয়ে হাজিদের সেলফি তোলা। পরে এ সেলফিগুলো তারা ফেসবুকে পোস্ট করা। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি ইভেন্টে পরিণত হয় এবং হাজিদের ইবাদতের যে মাহাত্ম্য, সেটা নষ্ট হয় সেলফি তোলার মাধ্যমে। যারা প্রকৃতই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে গিয়েছেন। সারা জীবনে একটু একটু সঞ্চয় একত্রিত করে আল্লাহর দিদার লাভে বাইতুল্লায় ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত করে নৈকট্য অর্জনে ব্যস্ত, সেলফির কার্যক্রম, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ তাদের ইবাদতে বিঘ্ন ঘটায়। সেলফির কার্যক্রম মুমিন হৃদয়ের একনিষ্ঠতায় বিঘ্ন ঘটায়। বিধায় একনিষ্ঠভাবে হজ পালনে সেলফি বাধা হিসেবে কাজ করে। যা বর্জন করা অত্যন্ত জরুরি।
কেন সেলফি থেকে বিরত থাকা জরুরি:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হজে গিয়ে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি এমন একটি হজ পালন করতে চাই, যা কোন দম্ভ প্রকাশ বা লোক দেখানো হবে না।’ এ ধরনের সেলফি তোলা ও ভিডিও করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মনোবাসনা পরিপন্থী।
আবার মিকাতে পৌঁছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, ‘হে আল্লাহ! এ হজে নিজেকে জাহির ও অন্যকে শোনানোর চেষ্টার ঊর্ধ্বে রাখো।’ কিন্তু বর্তমানে মিকাতে, ইহরামে, তাওয়াফে, সাঈতে, কুরবানিতে, আরাফাতে এবং জামারাতে পাথর নিক্ষেপের সময়ও চলছে ছবি এবং সেলফি তোলা। চলছে ফেসবুকে পোস্ট করা। যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের পরিপন্থী বিষয়। সুতরাং হজের সময় হাজিদের সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকাই আবশ্যক।
হজে সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকুন :
হজ পালনে ফরজ ওয়াজিব এবং সুন্নাহর খেলাপ হয় এমন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা উচিত। সৌদি আরবের জনপ্রিয় ইসলামি ব্যক্তিত্ব শেখ আবদুল রাজ্জাক আল-বদরও হজের সময় সেলফি তোলা নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি জানান, হজে লোক দেখানো কর্মকাণ্ড নিয়ে গুরুতর নিষেধাজ্ঞা আছে। হজ এবং ওমরাহের সময় ছবি তোলা ও ভিভিও বন্ধে মোবাইল এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি বহন নিষিদ্ধ করেছে সৌদি সরকার। কিন্তু অনেকেই নিরাপত্তা রক্ষীদের ফাঁকি দিয়ে মোবাইল বা অন্যান্য যন্ত্র নিয়ে যাচ্ছেন। হজ ও ওমরার যাত্রীরা পর্যটক নন, তারা হলেন আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে প্রত্যাশী, পুণ্যার্থী। তাই হজের সময় সেলফি না তোলাই হবে হজযাত্রীদের ঈমানি দাবি।
পরিশেষে :
যেখানে হজের কোনো রুকন সঠিকভাবে পালনে বিঘ্ন হলে মানুষের ওপর দম তথা কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়। সেখানে সেলফি তুলে নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া পাশাপাশি অন্যের হজের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো কুরবানি ওয়াজিব করে দেয়া মস্তবড় অপরাধও বটে। সুতরাং হজের সময় নিজেই নিজের ছবি তুলে পোস্ট করা থেকে বিরত থেকে হজের কার্যাদি সম্পন্নের দিকে মনোনিবেশ করুন। আল্লাহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে সঠিকভাবে হজের রুকনগুলো আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।
জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। ওমরা ও হজের ধারাবাহিক আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।
এমএমএস/এমএস