ফণীতে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:০৫ পিএম, ০৩ মে ২০১৯
আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন লোকজন। ছবিটি শুক্রবার মোংলা এলাকা থেকে তোলা। ছবি : মাহবুব আলম

 

ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকা‌বিলায় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছে দেশের সব রাজনৈতিক দল। প্রস্তুত রয়েছে সরকার, বেসরকারি সংস্থা, বিভিন্ন সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে পুরো বাংলাদেশ এখন ঐক্যবদ্ধ।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), জাসদসহ (রব) বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা নেতাকর্মীদের প্রতি ফণী মোকা‌বিলার আহ্বান জানিয়েছেন।

ফণী মোকাবিলার বিষয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একমত হয়েছে বিএনপি, যদিও এ ঘূর্ণিঝড় মোকা‌বিলায় সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছে দলটি। আওয়ামী লীগ যেমন উপকূলীয় জেলাগুলোর দলীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ নেতাকর্মীদের একত্রিত হয়ে ফণী পরবর্তী দুর্যোগ মোকা‌বিলা করার কথা বলেছে, বিএনপিও অনুরূপ নির্দেশনা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিকরাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কাজ করতে চায়।

ফণীকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডাব্লিউটিএ, বিআইডাব্লিউটিসি, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিসহ সংশ্লিষ্ট সব অফিস ও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

সরকারি সব সংস্থা ও বেসরকারি সংগঠনগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রথানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান উপকূলের সব জেলার ডিসিদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও প্রস্তুত আছেন।

আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ আজ (শুক্রবার) সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, উপকূলের সব জেলায় দলের নেতকর্মী, সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিসহ সবস্তরের নেতাকর্মীকে প্রস্তুত থাকতে হবে।

bangladesh-3.jpg

তিনি জানান, শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় ওষুধ, স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানিসহ অন্যান্য উপকরণ প্রস্তুত রয়েছে। মেডিকেল টিমও প্রস্থত রাখা হয়েছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এরশাদ তার দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্তদের পাশে থাকার। দলের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে উপকূলের সব জেলার জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্যদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এরশাদ।

দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিও ফণী মোকা‌বিলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে উপকূলের দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। ফণীতে আক্রান্ত সাধারণ মানুষকে দলের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের ও জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেছেন।

ঘূর্ণিঝড় ফণী মোকাবিলার জন্য নিজ দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জেএসসি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। আজ বিকেলে দলীয় এক সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। সভায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা ও সহযোগিতার জন্য জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্যরা হলেন- মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, মিসেস তানিয়া রব, শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, এস এম আনছার উদ্দিন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ বেলায়েত হোসেন, মোশারফ হোসেন ও এস এম শামসুল আলম নিক্সন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেন, গত বুধবার আমরা একটি সভা করেছি। সেই সভায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে পার্টির অফিসে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সব উপকূলীয় জেলায় ত্রাণ ইউনিট গঠন করা হয়েছে এবং ত্রাণ সহায়তাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। দলের নেতাদের সংশ্লিষ্ট ইউনিটে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

bangladesh

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিষয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা ইউনিটে কাজ করছেন। জেলায় জেলায় ত্রাণকেন্দ্র খোলা হয়েছে। ঝড়ে আক্রান্ত মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করার জন্য দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত আছেন।

তিনি বলেন, বলা হচ্ছে- ঘূর্ণিঝড়ের প্রথম আঘাত হবে রাজশাহীতে। এখানকার মানুষও ফণীতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হতে পারে। এ জন্য আমি রাজশাহীতে অবস্থান করছি। ঝড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি রাজশাহী ত্যাগ করব না।

জাসদের (ইনু) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। তা ছাড়া আমাদের দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোতে দলের নেতাকর্মীরা ফণীর পরে সরেজমিন দেখবে। এরপর ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতা করা হবে।

১৪ দলের শরিক দল কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক অসীত বরণ রায় এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিষয়ে আমার দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা আক্রান্তদের সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি সরকারি দলকে সহযোগিতা করবে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর বিষয়ে ১৪দলের পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি নেয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম ফোন বন্ধ করে দেন। ১৪ দলের আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা নিজ নিজ দলের পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। ১৪দল এ বিষয়ে এখনও কিছু বলেনি।

১৪দল নেতা অনীত বরণ রায় বলেন, ১৪ দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়নি। এ বিষয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।

এফএইচএস/জেডএ/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।