কে হচ্ছেন বিমানের এমডি?

রফিক মজুমদার
রফিক মজুমদার রফিক মজুমদার , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১০:৫৮ এএম, ০১ মে ২০১৯

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এম মোসাদ্দিক আহমেদকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে গতকাল। আসছে ৩১ মে তার চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। নতুন এমডি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিমানের পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ও সিনিয়র ক্যাপ্টেন ফারহাত হাসান জামিল। তিনি এর আগে কয়েক দফা ভারপ্রাপ্ত এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ টানা তৃতীয় মেয়াদে বিমানের এমডি ও সিইও পদে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত দু’জন বিদেশি নাগরিকসহ মোট ৩১ জন বিমানের এমডি ও সিইও পদে দায়িত্ব পালন করেন।

অভিযোগ রয়েছে, তাদের কেউ দুর্নীতি, অনিয়ম ও লোকসানের ধারা থেকে বের করে আনতে পারেননি বিমানকে। কর্পোরেশন থেকে কোম্পানি হলেও লাভের মুখ দেখেনি বঙ্গবন্ধুর তৈরি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। বরং সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুর্নীতি ও অনিয়মের ধরন ও প্রকৃতি। তবে তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সংস্থার প্রতিটি বিভাগে সংস্কার চলছে। এর অংশ হিসেবে নতুন এমডি ও সিইও-এর খোঁজে নেমেছে সংস্থাটি। এর মধ্যে নিজস্ব ওয়েবসাইটে এমডি’র খোঁজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। গত ১৪ মার্চ তাদের সাইটে এ সংক্রান্ত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংস্থাটি। ১৬ এপ্রিল ছিল আবেদন জমা দেয়ার শেষদিন। এ পদে ৭০ প্রার্থী আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ১২ বিদেশি।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মহিবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘কমার্শিয়াল এয়ারলাইন্সকে লাভজনক করার অভিজ্ঞতা রয়েছে- এমন এমডি খোঁজা হচ্ছে। এ পদে বাংলাদেশ থেকে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে বিদেশিদের খোঁজা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিমানকে লাভজনক ও গণমুখী করার জন্য নানামুখী কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। অচিরে এসবের ফল দৃশ্যমান হবে।’

বিমানের অডিট শাখা সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১০ বছরে শুধুমাত্র নন-সিডিউল ফ্রেইটার (অনির্ধারিত মালবাহী ফ্লাইট) থেকে লুটপাট হয়েছে ৭২০ কোটি টাকা। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হলে মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা হয় একটি তদন্ত কমিটি। ইতোমধ্যে ৪১২ কোটি টাকার প্রমাণ পেয়েছে ওই কমিটি। অর্থ আত্মসাৎকারীরা নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলায় বাকি টাকার প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ ব্রিটিশ নাগরিক কেভিন জন স্টিলকে প্রথমবারের মতো জাতীয় পতাকাবাহী বিমানের এমডি ও সিইও হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর দুই বছরের মধ্যে বিমানকে লাভজনক সংস্থায় পরিণত করার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। কিন্তু পরের বছর ১৭ এপ্রিল তিনি হঠাৎ ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

দু’জন বিদেশি এমডি’র একজন কাইল হেইউড। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে চাকরিতে যোগ দেন হেইউড। চুক্তির মেয়াদ ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি শেষ হয়। পরিচালনা পর্ষদ তার চুক্তির মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে চাইলেও তিনি শারীরিক অসুস্থতার কথা বলে আর চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর জন্য পর্ষদের কাছে অনুরোধ জানান।

এক বছরে হেইউড প্রায় তিন মাস শারীরিক অসুস্থতাজনিত ছুটিতে ছিলেন। ২০১৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বিমানের পরিচালনা পর্ষদের ১৩৬তম সভায় হেইউডকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়। তিনি বিমানের দ্বিতীয় বিদেশি এমডি।

গত ১৪ মার্চ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে এভিয়েশন বা এয়ারলাইন্সের পরিচালক পদে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। এ কারণে বিমানের কোনো সাবেক পরিচালক এবার আবেদন করতে পারেননি।

আরএম/এমআরএম/এমএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।