বেকারত্ব কমানোর উদ্যোগ নিন : রওশন এরশাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:১৫ এএম, ০১ মে ২০১৯

দেশে পাঁচ কোটি কর্মক্ষম মানুষ বেকার থাকায় বেকারত্ব কমাতে উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে সংসদকে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের উপনেতা বেগম রওশন এরশাদ। মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশনে সমাপনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের জরিপ অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা সাড়ে ১০ কোটি। এর মধ্যে মাত্র পাঁচ কোটি মানুষ কাজ করছে। বাকি সাড়ে পাঁচ কোটিই বেকার। এদিকে মনোনিবেশ করা দরকার। যদিও বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে কিছুটা কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে।

রওশন এরশাদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের একটা খারাপ দিক রাত জেগে ফেসবুক চালানো। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে অন্তত রাত ১২টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত ফেসবুক বন্ধ রাখা যায় কি-না একটু ভেবে দেখবেন। ফেসবুক যদি রাত ১২টার মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয় তাহলে অনেক সংসার বেঁচে যাবে। পাশাপাশি অনেক ছেলেমেয়ের জীবন বাঁচবে। কারণ তারা সারারাত জেগে থাকে। ঘুমায় না। এতে পড়াশোনারও অনেক ক্ষতি হয়।

সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে সংসদে যোগ দেয়ায় বিএনপিকে স্বাগত জানান প্রধান বিরোধীদলীয় উপনেতা নেগম রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, সংসদে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছি।

বক্তব্যে রওশন এরশাদ বলেন, সম্প্রতি শ্রীলঙ্কায় যে ঘটনা ঘটলো তা নিন্দনীয়। এতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত হয়েছি। সংসদে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শোকপ্রস্তাব আনা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার ধিক্কার জানাই। নিউজিল্যান্ডেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। সারাবিশ্বে সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেই চলেছে। এটা বন্ধ হচ্ছে না। সেই সঙ্গে নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। নুসরাতের ঘটনা দেখেছি। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের দ্বারা লাঞ্ছিত হচ্ছে। শিক্ষকের হাতেই যদি ছেলেমেয়েরা নিরাপদ না থাকে তাহলে তারা লেখাপড়া কার কাছে শিখবে।

রওশন এরশাদ বলেন, সহিংসতার বিষয়ে আমাদের সোচ্চার হতে হবে। সামাজিক অবক্ষয় যেভাবে বেড়ে চলেছে তা দুঃখজনক। সবমিলিয়ে সামাজিক অস্থিরতা চরম আকার ধারণ করছে। ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে রয়েছে সমাজের চরম অবক্ষয়। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মানুষের মধ্যে মনুষত্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনার বিচার করা সম্ভব হলে নির্যাতনের ঘটনা কমবে বলে মনে করি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নিতে পারেন।

বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, সামনে রমজান মাস। এ সময় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। অন্য দেশে রমজান মাসে পণ্যের দাম কমিয়ে দেয় আর আমাদের দেশে হয় উল্টো। প্রতিবছরই এটা হয়ে থাকে।

তিনি বরেন, রমজান মাসে প্রতিটি জায়গায় ছোট ছোট আকারে ইফতারি বিক্রি করে। অস্বাস্থ্য পরিবেশে তা বিক্রি করা হয়। এসব খাবার পরীক্ষা করা হয় না। এভাবে ইফতারি বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। যেন মানুষ অখ্যাদ্য না খেতে পারে।

তিনি বলেন, বহুতল ভবনগুলোতে আগুন নেভানোর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। রাজউক চেষ্টা করে কিন্তু রাজউকের কথা তো কেউ শোনে না। ভবনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা যদি সততার সঙ্গে কাজ করেন তাহলে আগুন লাগার ঘটনা কমতে পারে।

রওশন এরশাদ বলেন, ঢাকায় আমরা যে পানি খাচ্ছি তা ময়লাযুক্ত ও দুর্গন্ধময়। সুপেয় পানি পাওয়া অনেক দুরূহ ও কঠিন ব্যাপার। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সবাই যেন সুপেয় পানি পায় সে বিষয়ে আপনি পদক্ষেপ নেবেন।

তিনি বলেন, সিলেটের হবিগঞ্জের মতো জায়গায় অনেক বেশি বজ্রপাত হচ্ছে। ওখানে কেন এত বেশি বজ্রপাত হচ্ছে তার কারণ খুঁজে বের করা দরকার। সারাদেশেও অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এ সময় তিনি পাটকল শ্রমিকদের সমস্যা সমাধান করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি শেয়ারবাজার ও ব্যাংকিংখাত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।

রওশন এরশাদ বলেন, শেয়ারবাজারে তো শুরু থেকে ধস নেমে এসেছে। এখন আগের যুগের মতো মাটির ব্যাংকে টাকা রাখতে হবে বলে মনে করছি। ব্যাংক ও শেয়ারবাজার যেন ভালোভাবে চলে সেদিকে নজর দিতে হবে। শেয়ারবাজারে ছোট ছোট বিনিয়োগকারী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে রওশন এরশাদ বলেন, জঙ্গিবাদ এখন সারাবেশ্বে একটি বড় সমস্যা। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমার মনে হয় আমাদের দেশে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। তখন জাতির পিতাকে হামলা করে হত্যা করা হয়েছিল। তখন থেকে আমরা জঙ্গি হামলার সম্মুখীন হচ্ছি।

তিনি বলেন, চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ না করে যদি ৩২ করা হয় তাহলে ভালো হয়। প্রধানমন্ত্রী আপনি তো একজন মা। আপনি চিন্তাভাবনা করে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

এমইউএইচ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।