শ্রমিক-মালিক সুসম্পর্ক বজায় রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মে দিবসের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এবং শ্রমিক-মালিক পরস্পর সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবেদিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মহান মে দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার এক বাণীতে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিক ভাই-বোনসহ সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব, ইনশাআল্লাহ।’
বিশ্বের শ্রমজীবী ও মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্মৃতিবিজড়িত গৌরবোজ্জ্বল ত্যাগের ঐতিহাসিক দিন ১ মে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের মেহনতি মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে যে শ্রমিক ভাই-বোনেরা ৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী তাদের স্মৃতির প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতার আদর্শে দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পোশাক শিল্পখাতের শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৮) প্রণয়ন এবং দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের সামাজিক মর্যাদা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২, জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও সেইফটি নীতিমালা ২০১৩ এবং গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ প্রণয়ন করা হয়েছে, যা বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে স্থিতিশীল শিল্প সম্পর্ক এবং উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।’
সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এবং কার্যক্রম আরও সুদৃঢ় হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রম আইন বাস্তবায়নে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন পরিদফতর এবং শ্রম পরিদফতরের সক্ষমতা ও জনবল বৃদ্ধি করে অধিদফতরে উন্নীত করা হয়েছে। শ্রমিক ভাই-বোনদের যে কোনো সমস্যা সংক্রান্ত অভিযোগ গ্রহণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য সার্বক্ষণিক টোল ফ্রি হেল্পলাইন (১৬৩৫৭) চালু করা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিল্প কারখানায় বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ পরিদর্শন ও মনিটরিং ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। শ্রমজীবী নারীদের কল্যাণে চট্টগ্রামের কালুরঘাট ও নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ১ হাজার ৫৬০ শয্যাবিশিষ্ট শ্রমজীবী মহিলা হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে। শ্রমিকদের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়াসের অংশ হিসেবে রাজশাহীতে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা এবং প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।’
এছাড়া দুর্ঘটনা কবলিত শ্রমিক ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত শ্রমিকদের এ পর্যন্ত কল্যাণ তহবিল এবং কেন্দ্রীয় তহবিল হতে ৮৩ কোটি ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৫ টাকা এবং শ্রমিকদের মেধাবী সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় তহবিল দুটি হতে ৪ কোটি ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন শোষিত, বঞ্চিত ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি সর্বদা বাঙালি জাতি এবং বিশ্বের নির্যাতিত ও মেহনতি মানুষের মুক্তির কথা ভাবতেন– যা প্রতিফলিত হয়েছে তার প্রতিটি কথায় ও কাজে।
শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে শ্রমনীতি প্রণয়ন করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিত্যক্ত কলকারখানা জাতীয়করণ করে শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছিলেন। ১৯৭৩ সালে আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত ন্যাম শীর্ষ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেছিলেন, ‘বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, একদিকে শোষক, আর অন্যদিকে শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।’
এফএইচএস/এমএসএইচ/এমকেএইচ