জীবনে ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ একটি অপরাধ
“স্বপ্ন হবে বিশাল। জীবনে ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ একটি অপরাধ।” এমন সব উদ্দীপনায় ভরপুর কথা শুনিয়ে পাঁচ শতাধিক তরুণকে ৪০ মিনিটের জন্য মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে এপিজে আব্দুল কালাম।
শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি বক্তব্য রাখেন ৮৩ বছর বয়সী ভারতের ‘মিসাইল মানব‘। এ নামেই ভারতবর্ষে জনপ্রিয় তিনি।
কালাম বলেন, সবগুলো স্বপ্ন অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত মহৎ যত বই আছে সব পড়ে নিরবচ্ছিন্ন জ্ঞান অর্জন চালিয়ে যেতে হবে। এই জীবনে ছোট লক্ষ্য থাকাটা এক ধরনের অপরাধ।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ১১০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে এক আমন্ত্রণে ঢাকা সফর করছেন ভারতের সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।
তরুণদের সঙ্গে কালামের দেড় ঘণ্টার মতবিনিময় হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের নিজের জীবনের গল্প শোনান। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘স্বপ্ন পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যাত্রা থামানো চলবে না, এগিয়ে যেতে হবে।‘
ত্রয়োদশ শতকের ফার্সি কবি জালালউদ্দিন রুমির একটি কবিতা শোনান তিনি। যে কবিতা তার জীবন বদলে দিয়েছিল। তরুণদেরও কণ্ঠ মেলাতে বলেন এই কবিতায়। “আমি সম্ভাবনা নিয়ে জন্মেছি। আমি জন্মেছি মঙ্গল আর বিশ্বাস নিয়ে। এসেছি স্বপ্ন নিয়ে। মহৎ লক্ষ্য নিয়েই আমার জন্ম। হামাগুড়ির জীবন আমার জন্য নয়, কারণ আমি ডানা নিয়ে এসেছি। আমি উড়ব, উড়ব, আমি উড়বই।”
একটা সময় খবার যোটাতে সংবাদপত্র বিক্রি করতে হয়েছিল আব্দুল কালামকে। আর ওই কবিতা-মন্ত্রের জোরেই আজ তিনি এক সুউচ্চ আসনে আসীন।
এপিজে আবুল কালামের জন্ম ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর তামিলনাড়ুর ছোট একটি শহরে। ২০০২ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পেয়েছেন ‘ভারতরত্ন’ উপাধি।
প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় কাজ করেছেন কালাম। উড়োজাহাজ প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা শেষে তিনি ভারতের প্রথম মহাকাশযান এসএলভি-৩ তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। ওই মহাকাশযান দিয়েই ১৯৮০ সালে ভারত প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র রোহিনী উৎক্ষেপণ করে।
পরবর্তীতে পরমাণু নিয়ে গবেষণা করেন কালাম। বলেন, “পারমাণবিক শক্তি তখন অমঙ্গলের, যখন তা মানব উন্নয়নের প্রতিটি ক্ষেত্র ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করা হয়।”
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের পরিমাণ ৩০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান কালাম। ওই সাফল্যের অনুপ্রেরণায় তিনি লিখেছেন ‘টার্নিং পয়েন্টস’ নামে আরেকটি বই, যাতে নিজের সফলতার পথে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তিনি তুলে এনেছেন।
তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে এই বিজ্ঞানী বলেন, জীবনের লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে যেতে বার বার সমস্যা আসবে, সংকট পথ আটকাবে। কিন্তু হৃদয়ে রাখতে হবে একটি সংকল্প- “আমি সংকটজয়ী হব, সব সমস্যা পেছনে ফেলে ছিনিয়ে নেব সাফল্য।”
উপস্থিত তরুণদের তাদের জীবনের লক্ষ্য নিয়ে লিখে তা ই-মেইল ([email protected]) করতে বলেন কালাম।