শ্রীলঙ্কার হামলার পর উগ্রবাদীরা আরও বেশি উত্তেজিত
‘শ্রীলঙ্কার গির্জায় হামলার পর ধর্মীয় উগ্রবাদীরা আরও বেশি উত্তেজিত’ বলে দাবি করেছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) আয়োজিত 'বিশ্ব সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পর ‘উগ্রবাদীরা প্রতিশোধ নেবে’- এমন চিন্তা-ভাবনা আমরা বেশকিছু লোকের মধ্যে দেখেছি। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। শ্রীলঙ্কার ঘটনার পর তারা বেশ উত্তেজিত হয়েছে।
‘তারা পারলে আমরা কেন পারব না- এমন একটা ধারণা তাদের মধ্যে তৈরি হয়। ফলে ঝুঁকিটা আগের চেয়ে বেড়েছে। দুই মাস আগে আমাদের ঝুঁকির যে মাত্রা ছিল সেটা এখন একটু বেশি। তবে এটা নিয়ে বিশেষভাবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবে সিটিটিসি প্রধান যখন বক্তব্য রাখছিলেন তখনই রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলার মেট্রো হাউজিং এলাকায় র্যাবের জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলছিল। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই আস্তানা থেকে দুটি ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি আস্তানায় কমপক্ষে দুজন নিহত হয়েছেন। তিনটি পা দেখা গেছে। এখনও আস্তানায় আগুনে জ্বলছে।
নিহতদের পরিচয় জানতে চাইলে র্যাব ডিজি বলেন, আমরা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, পরবর্তীতে তাদের পরিচয় বলা যাবে। তবে এটা নিশ্চিত যে তারা জঙ্গি।
আরও পড়ুন >> কমপক্ষে দুজন নিহত : র্যাব ডিজি
'বিশ্ব সন্ত্রাস- জঙ্গিবাদ ও বাংলাদেশ' শীর্ষক আলোচনায় নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার হামলার প্রসঙ্গ তুলে মনিরুল ইসলাম বলেন, নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পর ওই লোকগুলো কিছুটা উত্তেজিত হয়েছে। শ্রীলঙ্কা খুব কাছের দেশ। একেবারে আঞ্চলিক জোটের একটি দেশ, ফলে এরা আরও বেশি উত্তেজিত হয়েছে। যেহেতু তাদের ওপর প্রভাব ফেলেছে, সেহেতু তারা হামলা করার চিন্তা করতে পারে। আমাদের চিন্তায় সেটা আছে, আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমরা সবাই মিলে যদি চেষ্টা করি তাহলে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের এ আশঙ্কা নস্যাৎ করে দিতে পারব।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের একটা অপচেষ্টা হয়েছে (সম্ভবত জঙ্গি হামলার)। আমরা সবটা বলিও না, কারণ বললে মানুষ আতঙ্কিত হবে। হলি আর্টিসানের ধাক্কা কিন্তু আমরা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এখনও অনেক বিদেশি জিজ্ঞাসা করেন, কোন রেস্টুরেন্টে যাওয়া যাবে, কোনটাতে যাওয়া যাবে না। কথায় কথায় ট্রাভেল অ্যালার্ট ইস্যু হয়। কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিদের জন্য ৩০টি দেশে ট্রাভেল অ্যালার্ট ইস্যু করে। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় ছিল না।
‘নিউজিল্যান্ডের হামলার পর আমরা দেখেছি, জঙ্গিবাদের পেছনে যে একটা শক্তি আছে তা কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়নি। কারণ হামলার চিন্তা করার মতো লোকজন এখনও অনেক আছে কিন্তু হামলা বাস্তবায়নের জন্য যে সক্ষমতা দরকার সেটা অনেক কমে গেছে।’
আরও পড়ুন >> লঙ্কান জঙ্গি জাহরানের পরিবারের ১৮ সদস্য নিহত
সাংবাদিকদের একটা দায়িত্ব আছে উল্লেখ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, একটা দেশের ঘটনা, সেটা দেশের মানুষকে প্রভাবিত করে। ফলে সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু শব্দের ব্যবহার নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। ধর্মীয় কিছু শব্দ আছে সেসব শব্দের ব্যাখ্যা আছে। এরা কেউ মুজাহিদ নয়, এরা জিহাদ করছে না। তাদের সঙ্গে ইসলাম ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। ফলে শহীদ হিসেবে আখ্যা করলে- এই কথাগুলো ধর্মপ্রাণ কেউ কেউ হয়তো উদ্বুদ্ধ হতে পারেন। তাই লাদেন কিংবা আমাদের দেশের তামিম- এদেরকে এমনভাবে চিত্রায়িত করা যাবে না যে তাদের অনুকরণীয় মনে করা যায়। এ দায়িত্ব মিডিয়ার। ইমাম-ওলামা-মাশায়েখদের একটা দায়িত্ব আছে। ওনারা যতই প্রচার করবেন, যতই কথা বলবেন, ততই উগ্রবাদ মাথা থেকে নেমে যাবে।
বোয়াফ সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান, লেখক ও কলামিস্ট মাসুম বিল্লাহ নাফি প্রমুখ।
এআর/এমএআর/পিআর