‘গোলাগুলির শেষের দিকে তারাই বাড়িটি উড়িয়ে দেয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:১৫ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৯

‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল কয়েকজন জঙ্গি এসে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। এরপর র‍্যাব ফোর্সেস এখানে এসে বাড়ির দরজায় নক করে, রাতে কেউ দরজা খুলেনি। এরপর বাড়ির কেয়ারটেকারকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই ঝুপড়ি ঘরটি থেকে আমাদের গুলি ছোড়া হয়। তবে আমাদেরও পর্যাপ্ত পরিমাণ ফোর্স ও প্রস্তুতি ছিল। র‍্যাবও গুলি ছুড়ে। র‍্যাব প্রায় ১৫০ রাউন্ড গুলি করেছে। গোলাগুলির শেষের দিকে তারাই বাড়িটিকে বিস্ফোরণের মাধ্যমে উড়িয়ে দিয়েছে।

বলছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। সোমবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

তাদের পরিচয় জানতে চাইলে র‍্যাব ডিজি বলেন, আমরা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছি, পরবর্তীতে তাদের পরিচয় বলা যাবে। তবে এটা নিশ্চিত যে তারা জঙ্গি।

ভবনের ভেতরের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দেখেছি ভেতরে মরদেহগুলো ছিন্ন-ভিন্ন অবস্থায় রয়েছে। তবে কয়জন মারা গেছে তা এখনও নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। এখনও পুরোপুরি বাড়িটাকে ক্লিন করা যায়নি। আমরা সেখানে তিনটা বিচ্ছিন্ন পা দেখেছি। এতে করে ধারণা করা যাচ্ছে সম্ভবত দুইজন মারা গেছে। বাড়িটি পরিষ্কার করতে কিছু সময় লাগবে। পরিষ্কারের পর বলতে পারব যে কতজন মারা গেছে।

বেনজীর আহমেদ বলেন, হলি আর্টিসানে হামলার পর থেকে আমরা প্রায় প্রতিনিয়তই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে গত রাতে আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এখানে আসি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে র‌্যাবের রুটিনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

jonghi-2

জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত যুবকদের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যাদের এই জঙ্গিবাদের দিকে দীক্ষিত করা হচ্ছে অনুরোধ করছি ফিরে আসতে। তাদের ভুল বোঝানো হচ্ছে। জঙ্গিবাদ ইসলাম ও মুসলমানের পক্ষে না, এটি ইসলাম ও মুসলমানের বিরুদ্ধে। আমাদের ধর্ম এগুলো সমর্থন করে না। এ ধরনের প্রত্যেকটি ঘটনায় ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

অভিযানের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে র‌্যাব ডিজি বলেন, অপারেশন পূর্ণাঙ্গভাবে শেষ হয়নি। এখন বম্ব সুইপিং ইউনিট কাজ করছে। এরপর কে নাইন ইউনিট (ডগ স্কোয়াড) আসবে। ওরা সুইপিং করার পর অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে।

এর আগে র‌্যাবের এডিজি (অপারেশন) কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে জানান, ‘বিস্ফোরণে জঙ্গিদের ছিন্ন-ভিন্ন দেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সুইপিংকালে তা দেখতে পেয়েছে। কমপক্ষে একজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।’

তিনি বলেন, ভেতরে অবিস্ফোরিত বোমা ও আইইডি (ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) দেখা গেছে। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। বিস্ফোরণে টিনশেড ভবনের টিনের চাল ও বেড়া উড়ে গেছে। টিনশেড ভবনটির পেছনে খাল। খালপাড়ে ঝোপজঙ্গল। সেখানেও উড়ে যাওয়া টিনের টুকরো, শরীরের অঙ্গ দেখা গেছে।

র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, বাড়ির মালিক আব্দুল ওহাবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তিনি এখন ঢাকার বাইরে। তিনি জানিয়েছেন, দেড়মাস আগে বাড়িটি ভাড়া নেয় দুইজন ভ্যান চালক। এ মাসে তাদের ছেড়ে দেয়ার কথা ছিল। তারা ভ্যান চালানোর আড়ালে জঙ্গি কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন কি-না তা খতিয়ে দেখা হবে।

সোমবার সকাল ৯টার দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বছিলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটিতে যান র‌্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। র‌্যাব সদস্যরা এ সময় আস্তানা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েন। র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে।

মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, আরও দুই-তিন ঘণ্টা পর বিস্তারিত বলা যাবে।

আস্তানাটির তথ্য জানতে ব্যবহার করা হয় ড্রোন। ড্রোন দিয়ে জঙ্গি আস্তানার ভেতরের ও বাইরের অবস্থা জানার চেষ্টা করে র‌্যাব ইন্টেলিজেন্স শাখা। আনা হয়ে অত্যাধুনিক মেশিন, যা দিয়ে দূর থেকে আস্তানার ভেতরের শব্দ ও কথাবার্তা শোনা যায়।

এর আগে রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মোহাম্মদপুর বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়েই বিস্ফোরণ ঘটে আস্তানায়। এরপর ভোর ৫টার দিকে বড় বিস্ফোরণ ঘটে।

benzir

বাড়িটি ঘেরাও করার পরই কেয়ারটেকারসহ তিনজনকে আটক করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- কেয়ারটেকার সোহাগ, সোহাগের বউ মৌসুমী ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ইউসুফ।

র‌্যাব-২ এর এসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, টিনশেড বাড়িটির কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসাবাদে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে ওই টিনশেড ভবনে কারা কারা থাকেন। কীভাবে ভাড়া দিয়েছেন। সোহাগ ওই এলাকায় ডিশের ব্যবসা করেন।

তিনি বলেন, টিনশেড বাড়িটির পাশে একটি মসজিদ রয়েছে। সম্প্রতি মসজিদটি সম্প্রসারণ করে মাদরাসা করার কথাও চলছিল। মসজিদের ইমাম ইউসুফকেও তাই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ওই টিনশেড বাড়ির বাসিন্দা জোনায়েদ জাগো নিউজকে বলেন, ওই টিনশেড বাড়িতে চারটি রুম। তিনি এক রুমে থাকেন। পেশায় রড-সিমেন্টের মিস্ত্রি, বাড়ি-ঘরের কাজ করেন।

তিনি বলেন, দুজন যুবক এক দেড় মাস হলো ভাড়ায় উঠেছেন। আজ ভোরে বিস্ফোরণের আগে আমাদের বের করে আনে র‌্যাব। ভোর ৫টায় যে বিস্ফোরণটি হয় তা ছিল খুব বড়।

জেইউ/এআর/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।