‘হঠাৎ গুলির শব্দ এরপর দরজায় ধাক্কা, ভয়ে আঁতকে উঠি’
‘তখন রাত সাড়ে ৩টা। হঠাৎ গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। পর পর তিনটা বিকট শব্দে ঘরসহ কেঁপে উঠলাম। প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলে গোলাগুলি। আতঙ্কে খাটের ওপর বসে রইলাম। কী করব বুঝতেছিলাম না।। এমন সময় হঠাৎ দরজায় ধাক্কা। ভয়ে আঁতকে উঠি। ভয়ে ভয়ে দরজা খুলে দেখি র্যাবের অনেক লোকজন। তাদের দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে যাই। তারা বলল, পাশের বাড়িতে জঙ্গিদের সঙ্গে র্যাবের গোলাগুলি হচ্ছে। এখনই বেরিয়ে আসুন। এতে একটু ভরসা পাই।’
সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এভাবেই রাতভর আতঙ্কে কাটানোর বর্ণনা দিচ্ছিলেন জঙ্গি আস্তানার পাশের বাড়ির বাসিন্দা মো. হারুন-অর-রশিদ।
দিবাগত রাত ৩টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলার মেট্রো হাউজিং এলাকার একটি বাড়িতে নাশকতার পরিকল্পনায় কয়েকজন জঙ্গি অবস্থান করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান শুরু করে র্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল।
এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির ভেতর থেকে জঙ্গিরা র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গুলির পাশাপাশি বোমা বিস্ফোরণের শব্দও ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
অভিযানের পাশাপাশি রাতভর আশপাশের বাড়ির আতঙ্কিত বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয় র্যাব সদস্যরা। তাদের একজন হারুন-অর-রশিদ। তিনি বলেন, আতঙ্কে যখন কোনো কিছু বুঝতেছিলাম না তখন র্যাবের সদস্যদেরকে দেখে একটু ভরসা পাই। ওনারা বললেন- এ বাড়ির পাশেই র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলি হচ্ছে। আপনারা এখানে নিরাপদ নন, দ্রুত আমাদের সঙ্গে আসুন। পরে ওনাদের সঙ্গে বেরিয়ে নিরাপদে চলে আসি।
তিনি আরও বলেন, সাড়ে ৩টার দিকে ২০ মিনিটের গোলাগুলি আর ৩টা বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণের পর আর কোনো শব্দ পায়নি। পরে ভোর ৫টার দিকে আবারও বিরাট শব্দে একটা বিস্ফোরণের শব্দ পাই। এটা সবচেয়ে বেশি শব্দের ছিল।
জঙ্গি আস্তানা সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই বাড়িটা একটা টিনশেডের একতলা বাড়ি। ওখানে তিনটা পরিবার ভাড়া থাকত। মাসখানেক আগে দুটা পরিবার চলে গেছে। পরে শুধু কেয়ারটেকার আর তার পরিবার থাকে। সপ্তাহখানেক আগে ওই বাড়ির একটা অংশ মসজিদ বানানো হয়েছে। মসজিদের জন্য নতুন একজন ইমাম নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাকে আমরা চিনি না। বাড়িটির মালিক আমার মুখ চেনা। তার নাম আব্দুল ওহাব। তবে তিনি থাকেন কোথায় তা জানি না।
ওই বাড়ির কেয়ারটেকার সোহাগ এলাকায় ডিসের লাইনের কাজ করেন বলেও জানান তিনি।
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটির ভেতরে বিস্ফোরণে অন্তত একজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।
তিনি বলেন, এখন সুইপিং চলছে। বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট সুইপিং করছে।
সোমবার সকাল ৯টার দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে বাড়িটিতে যান র্যাবের বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। র্যাব সদস্যরা এ সময় আস্তানা লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। র্যাবের স্পেশাল ফোর্স ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে।
ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন। ড্রোন দিয়ে জঙ্গি আস্তানার ভেতরের ও বাইরের অবস্থা জানার চেষ্টা করছে র্যাব ইনটেলিজেন্স শাখা। আনা হয়েছে অত্যাধুনিক মেশিন, যা দিয়ে দূর থেকে আস্তানার ভেতরের শব্দ ও কথাবার্তা শোনা যায়।
বাড়িটি ঘেরাও করার পরই কেয়ারটেকারসহ তিনজনকে আটক করেছে র্যাব। তারা হলেন- কেয়ারটেকার সোহাগ, সোহাগের বউ মৌসুমী ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম ইউসুফ।
জেইউ/এমবিআর/এমকেএইচ