বিনা অপরাধে মামলার অভিযোগ : পুলিশের দাবি সিগন্যাল অমান্য
কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও শুধুমাত্র বাসচালকদের চেক করার কথা বলায় এক মোটরসাইকেল চালককে মামলা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ট্রাফিক পুলিশের বিরুদ্ধে। তবে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অভিযোগকারী অসত্য কথা বলছেন।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় সদরুল আমিন নামে এক সার্জেন্ট ওই মামলা দিয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে অভিযোগ করেন মোটরসাইকেল চালক আহসান মুহাম্মদ। ওই পোস্টে তিনি সদরুলের ছবি ও ট্রাফিক প্রসিকিউশনের কাগজের ছবিও ব্যবহার করেন।
ওইদিন রাত ১২টার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট দিয়ে ‘সার্জেন্ট সদরুলের হাতে হয়রানির শিকার হয়েছেন’ বলে অভিযোগ করেন আহসান মুহাম্মদ। রোববার (২৮ এপ্রিল) সকাল থেকে পোস্টটি শেয়ার এবং এর নিচে বিভিন্ন ধরনের কমেন্টস হতে থাকে।
ভাইরাল হওয়া ওই পোস্টে আহসান মুহাম্মদ অভিযোগ করেন, সার্জেন্ট সদরুল মিরপুর-২ নম্বর এলাকায় তার বাইক থামিয়ে কাগজ পরীক্ষা করেন। একপর্যায়ে কোনো মামলা না দিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। যাওয়ার সময় সার্জেন্টকে উদ্দেশ করে আহসান বলেন, ‘বাইক চেক করার পাশাপাশি বাস ড্রাইভারদেরও একটু চেক কইরেন।’
অভিযোগকারীর ভাষ্য, এতেই তেড়ে আসেন সার্জেন্ট সদরুল। বলেন, এটা বলার আপনি কে? কাগজ দেন। এরপর কাগজপত্র দেয়া না দেয়া নিয়ে চলে তর্ক। একপর্যায়ে কাগজ নিয়ে মামলা দেয়ার সময় ছবি তোলেন বাইকচালক আহসান। এতে চটে গিয়ে সদরুল সব কাগজপত্র নিয়ে পুলিশ বক্সে যান। সেখানে আহসানকে সার্জেন্টের মুখোমুখি করানো হয়। তিনি আহসানের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে ছবি ডিলিট করেন এবং মামলা দেন। তবে আহসানের মোবাইল থেকে ছবিগুলো ডিলিট হয়নি।
এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের সংশ্লিষ্ট জোনের কর্মকর্তা জানান, ফেসবুকে অভিযোগকারী ওই ব্যক্তি মিথ্যাবাদী। তিনি (আহসান মুহাম্মদ) ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করায় ওয়ারলেসের মাধ্যমে মামলার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। এছাড়া যার ছবি (সার্জেন্ট সদরুল) ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে সেই সদরুল শিক্ষানবিশ সার্জেন্ট। তার মামলা করার এখতিয়ারও নেই। মামলাটি দিয়েছেন সিনিয়র সার্জেন্ট শাহ আলম।
অভিযোগ অস্বীকার করে সার্জেন্ট সদরুল আমিন বলেন, ‘আমার সঙ্গে তার (আহসান মুহাম্মদ) কোনো ধরনের কথাকাটাকাটি হয়নি। আমি তাকে মামলাও দেইনি। মামলা দিয়েছেন সিনিয়র স্যার (সার্জেন্ট শাহ আলম)। আমি শুধু কাগজগুলো নিয়ে স্যারকে দিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন তার কাগজ নিচ্ছিলাম তখন তিনি ছবি তোলা শুরু করেন। আমি বিষয়টি শাহ আলম স্যারকে বলি। স্যার তার সঙ্গে কথা বলেন। তিনি (আহসান) ছবিগুলো মুছে ফেলেছেন বলে আমাদের দেখান।’
এ বিষয়ে ডিএমপির ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের পল্লবী জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) সাইকা পাশা জাগো নিউজকে বলেন, আনুমানিক বিকেল ৪টার (শনিবার) দিকে মিরপুর টিএন্ডটি ক্রসিং হয়ে আসছিলাম। সিগন্যালে আমি গাড়িতে বসা। আর ওই বাইকার সিগন্যাল অমান্য করে বেরিয়ে যান। আমি সামনের সিগন্যালে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বাইকের তথ্য দিয়ে আটকাতে এবং মামলা দিতে বলি। ওই তথ্য অনুযায়ী সিনিয়র সার্জেন্ট শাহ আলম কার্যকর ব্যবস্থা নেন।
তিনি আরও বলেন, বাইক আটকানোর পর শিক্ষানবিশ সার্জেন্ট সদরুলকে কাগজপত্র চেক করতে বলেন। কাগজপত্র ঠিক থাকায় তিনি বাইকারকে কাগজপত্র ফিরিয়ে দেন। তবে সিগন্যাল অমান্য করায় শাহ আলম তার বিরুদ্ধে ট্রাফিক প্রসিকিউশন (মামলা) দেন। সদরুলের কাছে ওয়্যারলেস ডিভাইসও নেই। আমার মেসেজ সম্পর্কেও সে জানে না। কারণ সে শিক্ষানবিশ।
সাইকা পাশা আরও বলেন, সিগন্যাল অমান্য করলে ট্রাফিক সার্জেন্ট মামলা দিতে পারেন। তিনি ট্রাফিক সিগন্যাল অমান্য করেছেন, সেটার ছবিও আমাদের কাছে আছে। তিনি যেটা করেছেন সেটা অন্যায়। আবার মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষিপ্ত হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মিথ্যাচার করা আরও বড় অন্যায়।
‘যে সার্জেন্টের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে তার অবস্থাটা কেউ বুঝতে চাইবে না। অথচ এখানে তাকে অনৈতিকভাবে অপরাধী বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টের কারণে সামাজিকভাবে তাকে হেয় করা হয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষানবিশ সার্জেন্ট তথা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপরাধে আরও কী ব্যবস্থা নেয়া যায় সে বিষয়ে সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও জানান পল্লবী জোনের এসি সাইকা পাশা।
তবে এ ব্যাপারে অভিযোগকারী আহসান মুহাম্মদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জেইউ/আরএস/এমএআর/এমএস