রোহিঙ্গারা যেতে চাইলেও সংস্থারাই পাঠাতে চায় না

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৩২ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গারা দেশে কিংবা ভাসানচরে যেতে চাইলেও অনেক সংস্থা আছে তারাই পাঠাতে চায় না। কারণ এখানে বিভিন্ন সংস্থা, এনজিও থেকে শুরু করে অনেকেই ভলেন্টিয়ার সার্ভিস দিতে আসে। আমার যেটা ধারণা ওই জায়গাটায় সমস্যা। সাংবাদিকরা সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলতে পারেন।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সদ্য সমাপ্ত ব্রুনাই সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমে তারা যখন আসে তখন তাদের একটা আতঙ্ক ছিল। সেই সময়টা যখন কেটে গেছে, যখন একটু সুস্থ তখন বেকার থাকাটা খুব একটা খারাপ দিক। এ ধরনের একজন সুস্থ মানুষ বেকার থাকলেই তো নানা ধরনের চিন্তা মাথায় আসে। সবচেয়ে যেটা আশঙ্কাজনক এদের খুব সহজে জঙ্গিবাদের দিকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। এদের হায়ার করা যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর যে অমানবিক অত্যাচার হয় তখন তারা আমাদের দেশে আসে। তখন মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা আলাপ-আলোচনা চালিয়েছি এবং তাদের সঙ্গে আমাদের একটা চুক্তিও স্বাক্ষর হয়েছে। মিয়ানমার স্বীকার করেছে এদের ফেরত নেবে। তারা যখন প্রস্তুত হলো তখন একটা তালিকাও হলো, সেই তালিকাটা ইউএনএইচসিআর অনুমোদন করলো। কিন্তু যে মুহুর্তে রোহিঙ্গারা যাওয়ার কথা সেই মুহুর্তে এখানেই তারা প্রতিবাদ শুরু করলো, তারা যাবে না।

তিনি বলেন, কিছু যদি আমরা পাঠাতে পারতাম, তাহলে হয়তো এটা অব্যাহত থাকতো। জাপান, চীন, রাশিয়া, ভারতের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। তারা হয়তো ঠিক ওদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে না। তবে আমাদের সঙ্গে যখন আলোচনা হয় তখন তারাও চায় রোহিঙ্গারা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাক। তাদের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে যতটুকু দরকার ততটুকু তারা কিন্তু বলছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গারা ফেরত গেলে তাদের জন্য ঘরবাড়ি করে দেয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবস্থা করতেও চীন, ভারত, জাপান রাজি। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে বর্ডারের যে কয়টা দেশ আছে- চীন, ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড এবং লাওস তাদের সঙ্গেও আমরা আলোচনা করেছি। কারণ প্রত্যেক দেশেই কিন্তু এদের কিছু কিছু রিফুজি আছে। এই সমস্যাটা প্রতি নিয়ত, প্রতি বর্ডারে হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি যে যৌথভাবে কী পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

তিনি বলেন, যে তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি আমার সঙ্গে দেখা করেছে তাদের আমি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি-রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করতে চায়। আমার প্রস্তাব তাদের কাছে আপনারা যা কিছু করবেন সেটা মিয়ানমারের মাটিতে করেন। এর মধ্যে ইউএনএইচসিআরসহ কিছু সংস্থা মিয়ানমারে যাচ্ছে। বলছে, এখানে মিয়ানমারের সরকারেরও একটা প্রচণ্ড অনিহা দেখা দিচ্ছে। আবার যখনই রিফুজি যাওয়ার কথা ওঠে তখন ওখানে একটা গোলমাল শুরু হয়। এই সমস্যাটা কারও ওপর দোষারোপ করে না। সব সময় রিফুজি থাকলে কিছু লোক ওই রিফুজিদের লালন-পালনের বিষয়ে যতটা আন্তরিক থাকে, তাদের ফেরত দেয়ার ব্যাপারে ততটা আন্তরিক থাকে না।

তিনি আরও বলেন, আমি স্পষ্টভাবে ওই তিন প্রতিনিধিকে বলে দিয়েছি, যে সামনে আমাদের বর্ষাকাল। ঝড় বৃষ্টি হতে পারে, আমাদের জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এতগুলো মানুষ সেখানে যদি কোনো রকম দুর্ঘটনা হয়, এর জন্য কে দায়ী থাকবে? এই সব অর্গানাইজেশনকে কিছুটা দায়ভার নিতে হবে। জাতিসংঘকেও সে কথাটা আমি জানিয়েছি। আমাদের প্রচেষ্টাও আমরা চালাচ্ছি।

তিনি বলেন, এখানে একটা মানবিক দিক রয়ে গেছে। আমরা অতটা চাপ দিতে পারি না। জাতিসংঘের যে সমস্ত সংস্থাগুলো আছে যারা রিফুজি নিয়ে কাজ করে বা মাইগ্রেশন নিয়ে কাজ করে বা বিভিন্ন সংস্থা যারা, তাদেরও কথা বলছি। পাশাপাশি ভাসানচরে আমরা যে উন্নয়ন কাজটা করেছি সেই ছবিগুলো তাদের দেখিয়ে আমরা বলছি, এখানে তারা যেতে পারে। আমি মনে করি, কক্সবাজার যাওয়া খুব সহজ, থাকার জায়গা খুব সুন্দর। মানবিক কারণে যারা সেবা দিতে আসেন তারা বোধহয় নিজেদের সেবাটার দিকেও একটু বেশি করে তাকান। এখানেই তাদের আপত্তি। নইলে এই রিফুজিরা যে অবস্থায় থাকে, থাকাটাও তো কষ্টকর। ৪০ হাজারের ওপর বাচ্চা জন্ম নিয়েছে এখানে, আপনারা হয়তো চিন্তাও করতে পারবেন না।

এইউএ/জেএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।