ওয়াসার পানি পানে অসুস্থ হলে এমডি কি দায়ভার নেবেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:৫৫ পিএম, ২০ এপ্রিল ২০১৯

ওয়াসার পানি শতভাগ বিশুদ্ধ বলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যে দাবি করেছেন তা প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ওয়াসার পানি পানে অসুস্থ হলে এমডি কি দায়ভার নেবেন? তার (ওয়াসার এমডি) দাবি আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।

শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মহিউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ওয়াসার উত্তোলিত পানি পরিশোধিত হলেও সরবরাহকৃত পানি কোনো ভাবেই বিশুদ্ধ নয়। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি।

তিনি আরও বলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা ঠিক না বেঠিক, এ বিষয়ে আমরা কোনো বিতর্কে যেতে চাই না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ওয়াসার এমডি নিজেও সরাসরি ওয়াসার পানি পান করেন না। শুধু তিনি কেন, ঢাকা শহরের মোটামুটি সচেতন কোনো নাগরিকই ওয়াসার পানি সরাসরি পান করেন না। সবাই ফুটিয়ে বা ফিল্টার করে পান করেন।

আরও পড়ুন> টিআইবির প্রতিবেদন ‘নিম্নমানের’ ‘ঢালাও’ ‘স্ট্যান্টবাজি’ : ওয়াসা

মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরবরাহ লাইনের বেহাল দশা, সরবরাহ লাইন তদারকি না করা, বিভিন্ন বাড়ির মালিক কর্তৃক বাড়ির পানির ট্যাংক দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করা পানি দূষণের অন্যতম কারণ। আমাদের কাছে এমন শত শত উদাহরণ রয়েছে, যাদের সাপ্লাইয়ের পানিতে দুর্গন্ধ বা ময়লার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমে ওয়াসার পানির এই দুরবস্থার চিত্র দেখেছি। ওয়াসার এমডির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তার কাছে আমাদের প্রশ্ন, যদি নগরীর বাসিন্দারা আজ থেকে ওয়াসার পানি পান করে অসুস্থ হন, তাহলে তার দায়ভার কি তিনি বহন করবেন?

নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক বলেন, আমরা মনে করি, ওয়াসার পানি বিশুদ্ধ কি না তা নিয়ে টিআইবির সাথে তর্কযুদ্ধে যাওয়াটা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়। টিআইবিসহ বিভিন্ন সংগঠনের গঠনমূলক সমালোচনাকে আমলে নিয়ে নিজেদের অব্যবস্থাপনা দূর করাই শ্রেয়। সবাই মিলে কীভাবে আমরা সুস্থ ও সুন্দর থাকতে পারি, তাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

আরও পড়ুন> শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত হলে ফেরেশতা হয়ে যেতাম

এদিকে ঢাকা ওয়াসায় অনিয়ম রয়েছে, পানি সুপেয় নয় এবং সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। ওয়াসা সম্পর্কে টিআইবির এই প্রতিবেদনকে ‘নিম্নমানের’, ‘ঢালাও’, ‘স্ট্যান্টবাজি’ বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এটা প্রফেশনাল কোনো গবেষণার প্রতিবেদন নয়, এটা একটা রিপোর্টের মতো হয়েছে। এটা নিম্নমানের ও ঢালাও প্রতিবেদন। এতে টিআইবি নিজেদের পার্সপেক্টিভ উল্লেখ করেছে, এটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে ডাটা কালেক্ট করতে পারেনি। রিপোর্টে উল্লেখ করা ওয়াসার অনিয়মের অভিযোগটি ঢালাও।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৭ এপ্রিল) টিআইবির পক্ষ থেকে ‘ঢাকা ওয়াসা: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে ওয়াসার অনিয়ম ও দুর্নীতি সম্পর্কে বলা হয়, সেবাগ্রহীতাদের ৮৬.২ ভাগ ওয়াসার কর্মচারী এবং ১৫.৮ ভাগ দালালকে ঘুষ দিয়ে থাকেন।

এর মধ্যে পানির সংযোগ গ্রহণে ২০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা, পয়ঃনিষ্কাশন লাইনের প্রতিবন্ধকতা অপসারণে ৩০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০, গাড়িতে জরুরি পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০, মিটার ক্রয় বা পরিবর্তন করতে ১ হাজার থেকে ১৫ হাজার, মিটার রিডিং ও বিল-সংক্রান্ত বিষয়ে ৫০ থেকে ৩ হাজার এবং গভীর নলকূপ স্থাপনে এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণ করা হয়।

এএস/এমএসএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।