প্রয়োজনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিজেএমইএ ভবন ভাঙা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০১:৫৬ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রয়োজনে বিদেশিদের মাধ্যমে হাতিরঝিলের বিজেএমইএ ভবন ভাঙা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। বুধবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান।

তিনি জানান, ভবনটি ভাঙতে আগ্রহী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে দরপত্র দাখিল করতে বলা হয়েছে। ভবন ভাঙায় আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশীয় প্রতিষ্ঠান যদি না পাওয়া যায় সেজন্য বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবৈধভাবে নির্মিত বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে সেটাকে ভেঙে ফেলার কার্যক্রম নিয়েছি, গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ভবনটি আমরা দখলে নিয়েছি, ভবনে অন্য কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছি। ভবনে সেবামূলক যেসব সংযোগ ছিল একেবারে প্রয়োজনীয় সংযোগ ছাড়া বিচ্ছিন্ন করেছি। এই ভবনটি ভেঙে ফেলার জন্য একটি পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। ভবনটি গুঁড়িয়ে দেয়ার পর যেখানে পড়বে আশপাশে যাতে কোনো দুর্ঘটনার মুখোমুখি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, অর্থাৎ বিদ্যুতের লাইন অনেক দূরে সরিয়ে দেয়া, পানি ও গ্যাসের লাইন অনের দূর থেকে বিচ্ছিন্ন করাসহ একটা প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে।’

র‌্যাংগস ভবন ভাঙতে গিয়ে বেশ প্রাণহানি হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এবারে আমাদের প্রস্তুতি বিজ্ঞানসম্মত, প্রযুক্তিসম্মত হবে, যাতে ভবনটি ভাঙতে গিয়ে কোনো ধরনের প্রাণহানি কিংবা কোনো রকম আনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির মুখোমুখি না হই, সেই প্রস্তুতি নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’

রেজাউল করিম বলেন, ‘আজকে আমরা সব জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়েছি, এই জাতীয় ইমারত ভাঙায় যারা অভিজ্ঞ তাদের ২৪ এপ্রিলের মধ্যে কোটেশন দাখিল করার জন্য অনুরোধ করেছি। আমরা আইনগত পদ্ধতি অনুসরণের স্বার্থেই বিভিন্ন আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের কাছে টেন্ডার আহ্বান করেছি, ২৪ তারিখের মধ্যে টেন্ডার পেয়ে ২৫ তারিখের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো কোন সংস্থা উপযুক্ত যাদের দিয়ে ভাঙা সম্ভব হবে।’

‘আমরা যদি উপযুক্ত সংস্থা পাই তাহলে তদের সমন্বয়ে আর যদি উপযুক্ত সংস্থা না পাওয়া যায় তবে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাজউকের পক্ষ থেকে বিল্ডিংটাকে উচ্ছেদের জন্য যে প্রক্রিয়ায় যাওয়ার দরকার সেই প্রক্রিয়ায় যাবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘উপযুক্ত সংস্থা না পাওয়া গেলে আমরা নিজেরাই ভাঙব। ভাঙার ক্ষেত্রে দায়-দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে। কারণ, আমরা চাই রাষ্ট্রের চমৎকার একটি স্থাপনার মধ্যে এই ধরনের একটি ভবন টিকে না থাকুক। আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। যারা বেআইনি স্থাপনা নির্মাণ করবেন আমরা তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনতে চাই।’

‘ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নয়, আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা এই ভবনটি ভেঙে ফেলব। সেক্ষেত্রে নানা রকমের পরিকল্পনা আছে। যারা টেন্ডারে অংশ নেবেন তাদের মধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মতো উপযুক্ত কেউ আছেন কি না তা খতিয়ে দেখবো। যদি না থাকে, প্রয়োজনে আমরা বাইরের প্রযুক্তি সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আসবো।’

গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ইতোমধ্যে দেশের বাইরে এ জাতীয় কাজে যারা অভিজ্ঞ, নির্মাণ প্রযুক্তিতে যারা দক্ষ তাদের সঙ্গে আমাদের কথাও হয়েছে। আমরা দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দিতে চাই। যদি সেরকম না পাই, তবে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে। কোনোভাবেই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে নয়, কোনোভাবেই মানুষের জীবন ও মালের ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে এই ভবন ভাঙা হবে না।

সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা হবে কি না- জানতে চাইলে বলেন, ‘এ জাতীয় একটি কাজ সম্পন্ন করার জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং আমাদের অধীনস্থ রাজউকই যথেষ্ট। আমরা এলাকার নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ের স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অনেকের সাহায্য নিতে পারি। কিন্তু ইমারতটি ভেঙে ফেলার ক্ষেত্রে বাইরে অন্য কোনো সংস্থার প্রয়োজন হবে না।’

‘ডিনামাইট দিয়ে ভবনটি ভাঙার কথা বলা হচ্ছে- যে পদ্ধতির কথা আপনারা পত্র-পত্রিকায় শুনেছেন, সবটা সঠিকভাবে আসেনি। আমি আশা করি ২৪ তারিখের পরই আপনারা তথ্য পেয়ে যাবেন। আধুনিক প্রযুক্তিতে এমন সব কৌশল সৃষ্টি করা হয়েছে, আমাদের এই বিল্ডিংটি ভাঙতে বেশি সময় লাগবে না। এক ঘণ্টার মধ্যেই বিল্ডিংটি স্তুপাকারে ওই জায়গায় বসে পড়বে।’

ডিনামাইট দিয়ে ভবন ভাঙা হচ্ছে কি, হচ্ছে না- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ডিনামাইট শব্দটা প্রচলিত অর্থে একটি বোমার ব্যবহার। আসলে সেই ডিনামাইট নয়, নানা রকমভাবে আছে। বাঘ মানে সব সময় সুন্দরবনের বাঘ নয়, অনেক সময় ছারপোকা হয়ে যায়। সেই ডিনামাইট এখানে নয়।’

তিনি বলেন, ‘একটা পদ্ধতি আছে সেই পদ্ধতির বাহ্যিক পরিচিতি ডিনামাইট আকারে, কিন্তু এটি কোনোভাবেই ডিনামাইট বোমা মেরে বিল্ডিং ভেঙে ফেলা নয়। এটা ভেঙে ফেলার একটি কৌশল, প্রযুক্তি। প্রচলিত অর্থে যে ডিনামাইট বোমা সেটা নয়।’

কবে নাগাদ ভাঙা শেষ হবে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২৪ এপ্রিলের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করেছি, ২৫ তারিখ থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে দেব। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার আওতায় কোনোভাবেই টোটাল ভবন ভেঙে স্তুপ সরিয়ে ফেলা...কোনোভাবেই তিন মাসের বেশি হবে না। জায়গাটা পরিষ্কারও হয়ে যাবে তিন মাসের মধ্যে ইনশাআল্লাহ।’

অন্যান্য অবৈধভবন ভেঙে ফেলবেন কি না- জানতে চাইলে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে বড় পরিকল্পনা নিয়েছি, ২৪টি টিম কাজ করছে ভবন পরিদর্শন করে রিপোর্ট দিতে। দু’টি তদন্ত কমিটি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে একটি প্যাকেজ প্রোগ্রাম করবো। অতীতে এডহক ভিত্তিতে হয়েছে, যে একটি ভবন ভেঙে দায়িত্ব শেষ। এবার তা নয়, যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মনে করব, যেগুলো আনঅথরাইজড মনে করব, সেগুলোকে নিয়মিত পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার মধ্য থেকে সম্পন্ন করবে। আজ একটু করলাম, কালকে একটু করলাম, পথে থেমে গেলাম, এমন পরিস্থিতি ভেতর নয়। আমরা পরিপূর্ণ একটি কার্যক্রমে যাচ্ছি। আগামী সপ্তাহে সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে বলতে পারব।’

আরএমএম/এনএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।