বেনাপোল কাস্টমে রাজস্ব ঘাটতি ৫৯ কোটি টাকা
দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টম হাউসে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। দুই মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৯৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ৪৩৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
কলকাতা থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে মালামাল আনা যায়। আর সে কারণে আমদানিকারকরা এ পথে আমদানি করতে চাইলেও কাস্টমস ও বন্দরে হয়রানি, শুল্ক ফাঁকি, চোরাচালানরোধসহ বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও অব্যবস্থাপনা দূর করতে পারলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি হবে বলে মনে করছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। দেশের চাহিদার অধিকাংশ পণ্যই এই স্থলপথে আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি বেনাপোল দিয়ে আমদানি কমতে শুরু করেছে।
আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেয়া, তার উপর জরিমানা আদায়, প্রতিটি কেমিক্যাল পণ্য টেস্টে পাঠানো, দিনের পর দিন ফাইল আটকে রাখা, অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানাবিধ হয়রানির কারণে আমদানিকারকরা এ বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছেন বলে ব্যবাসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।
কাস্টম সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ-বছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৯০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগস্টে ২৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, কতিপয় কাস্টমস কর্তাদের অহেতুক হয়রানির কারণে রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি। এছাড়া সপ্তাহে দুই একদিন অনলাইন সিস্টেম বিকল, শতভাগ কায়িক পরীক্ষা করানোর কারণেও ব্যবসায়ীরা অন্য বন্দরের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে রাজস্ব আদায় চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। হয়রানি, বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি দীর্ঘদিনের দাবিকৃত ক্লিয়ারিং হাউস চালু হলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কয়েকগুণ বাড়বে।
তিনি আরো বলেন, রাসায়নিক পরীক্ষা ও আমদানিকৃত পণ্যের ওপর কাস্টম কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত লোড না চাপালে রাজস্ব আদায় বাড়বে কয়েকগুন। সবার আন্তরিকতা থাকলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রমের গতিশীলতা যেমন বাড়বে তেমনি সরকারের রাজস্ব আদায়ও বেড়ে যাবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আইন বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান জানান, এ বন্দর দিয়ে কাঁচা ফলমূল আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ, বেনাপোল স্থলবন্দরের নানা বিড়ম্বনা, অনৈতিক সুযোগ গ্রহণ, ইক্যুইপমেন্ট সমস্যা, চুরিরোধসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়লে আমদানি-রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে রাজস্ব আদায়ও।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন জানান, ভারত থেকে এদেশে পণ্য আমদানি হলে আগে বনগাঁয় ইউনিয়ন পরিষদ টোল আদায় করতো। এখন সেখানে বনগাঁ পৌরসভা কালিতলায় গাড়ি পার্কিং করে টোল আদায় করছে সিরিয়াল ধরে। এতে আমদানিকৃত পণ্যবাহী গাড়ি ৩-৪ দিন সেখানে পড়ে থাকছে। যে কারণে ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দরে চলে যাচ্ছেন। সেখানে কোন টোল দিতে হয়না।
এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার এএফএম আবদুল্লাহ খান জানান, ঈদের পর পন্য আমদানি কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। আগামীতে এই ঘাটতি থাকবেনা। সরকারের রাজস্ব আদায়ের স্বার্থে কিছু কিছু পণ্যের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রয়োজন বিধায় সেসব আইটেম পরীক্ষা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কোনো কর্মকর্তা হয়রানি করলে আমাদের জানালে আমরা সেটা দেখবো।
জামাল হোসেন/এআরএ/আরআইপি