পদত্যাগ করলেন লতিফ সিদ্দিকী


প্রকাশিত: ০২:০৩ পিএম, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পদত্যাগ করেছেন সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী। টাঙ্গাইল-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর পর সন্ধ্যায় আবেগতাড়িত বক্তব্যের মাধ্যমে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

বক্তব্যকালে লতিফ সিদ্দিকী নিজেকে সাচ্চা মুসলমান দাবি করলেও পবিত্র হজ, তাবলীগ-জামায়াত ও মুহাম্মদ (সা.)-কে কটুক্তির বিষয়ে ক্ষমা চাননি। বরং তিনি বলেছেন, ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে আমাকে হেয় করেছে।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে মাগরিবের নামাজের বিরতির পর অধিবেশন শুরু হলে স্পিকারের অনুমতি নিয়ে লতিফ সিদ্দিকী ফ্লোর নেন। তিনি এসময় একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এরপর পদত্যাগের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। অধিবেশন কক্ষেই একটি সাদাখামে স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেয়া হয়। স্পিকার এসময় চিঠিটি খুলে দেখেন। বিটিভি ও সংসদ টিভিতে এ সময় সংসদের অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দেয়ার আগেই তার ওয়াদা অনুযায়ী তিনি পদত্যাগ করলেন।

গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে হজ ও তাবলীগ জামায়াত নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেয়ায় তিনি মন্ত্রিসভা, দলের সকল পদ থেকে বহিষ্কৃত হন। এবিষয়ে লতিফ সিদ্দিকী সংসদে বলেন, ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে আমাকে হেয় করেছে। একই সাথে আমাকে সরকারের প্রতিপক্ষ বানাতে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে।

লতিফ সিদ্দিকী তার বক্তব্যের শুরুতেই নিজেকে বাঙালি, মুসলিম ও একজন আওয়ামী লীগার বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, এই পরিচয় মুছে দেয়ার মতো শক্তি পৃথিবীর কারো নেই। কিন্তু জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমার ধর্ম কুঠরিতে আলোড়ন আন্দোলন দেখা দিয়েছে। আমি বলতে চাই আমি ধর্মবিরোধী নই। আমি সাচ্চা মুসলমান। ধর্ম অনুরাগী। যে ফরজ একবার করার কথা বলা হয়েছে সে হজ আমি নিজেও করেছি। যারা ফরজ তরক করে সুন্নত মুস্তাহাব নিয়ে ছুটে তাদের সাথে আমার ভিন্নতা রয়েছে। তবে রাজনৈতিক জীবনে এখনো যেমন বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করছি ভবিষ্যতেই এর ব্যতিক্রম হবে না।

সংসদে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, সবার আগে ঠিক করতে হবে রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি হবে। বাঙালি আত্মপরিচয়ের সড়ক ঘোষণায় স্কুল ও কলেজ জীবনে চারবার বহিস্কার হতে হয়েছে। তিনি ইসিকে দেয়া স্পিকারের চিঠি সর্ম্পকেও প্রশ্ন তুলেন। তবে তিনি শেষ বেলায় কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন না বলে ঘোষণা দেন।

অধিবেশনে বক্তব্য শেষ করেই লতিফ সিদ্দিকী তার পদত্যাগের চূড়ান্ত ঘোষণা দেন। তবে তিনি কাউকে দোষারোপ করেননি। বরং তার আচরণে দেশবাসী কোনো কিছু মনে করলে নতমস্তকে ক্ষমা চান। এরপর স্পিকারের কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন।

যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে গতবছর ১৯ সেপ্টেম্বর লতিফ সিদ্দিকী হজ ও ধর্ম সম্পর্কে আপত্তিকর উক্তি করার পর আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগেই মন্ত্রিত্ব হারান লতিফ সিদ্দিকী। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তার তথ্য উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কেও আপত্তিকর উক্তি করেন তিনি। এরপর লতিফ সিদ্দিকী ভারত হয়ে দেশে ফেরেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়। পরে কারাগারে যেতে হয় তাকে। এরপর নির্বাচন কমিশনে গিয়ে লতিফ সিদ্দিকী সর্বশেষ সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

এইচএস/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।