ঢাকার রাজপথে পরিদের হাট
পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন আদলে উৎসব পালন চলছে। কোথাও শুরু হয়েছে খেলা আবার কোথায় মেলা। বৈশাখজুড়ে তা চলবে। বৈশাখী মেলা ছাড়াও আয়োজন করা হয়েছে ঘুড়ি উড়ানো, লাঠি খেলাসহ বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
দেশের বিভন্ন অঞ্চলে বসেছে হালখাতার হাট। কিন্তু ঢাকা মহানগরীতে বসেছে অঘোষিত বৈশাখী মেলা। এক অর্থে বাঙালির প্রাণের উৎসবকে বরণ করে নিতে কোটি মানুষের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ঢাকার রাজপথে হাতপাখা, বেলুন, ঢাক-ঢোল, তবলা, গাড়ি, বেহালা, পুতুল, সুন্দরী পরি, বৈশাখী ধান তোলার সরঞ্জাম কুলা, ডালা ও সুরের বাঁশিসহ নাম না জানা আরও অনেক খেলনার সমাহার নিয়ে বসেছে বিক্রেতারা। রমনা, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী এবং চারুকলাকে ঘিরে কাটাবন মসজিদের পাশ থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত শত শত দোকানদার বসেছে তাদের বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে।
পরির হাট
অন্যান্য সামগ্রীর মতো রাজধানীর শাহবাগে বিভিন্ন সামগ্রীর সঙ্গে বসেছে পরির দোকান। জিন, পরি আর ভূত-পেত্নির গল্প শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তারপরও পরির দোকান বসেছে-এমন খবর হয়তো কেউ পাবেন না। পরির হাটের খবর কেউ দিলেও তা বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার মতো নয়। তবে এবার বিশ্বাস যে করতেই হবে। কারণ পরিদের নিয়ে রাজধানীর শাহবাগের রাজপথে পুতুলপরির হাট বসিয়েছেন দু’জন। তারা পরিদের দাম নিচ্ছেন ভিন্ন ভিন্ন। কারও কাছে থেকে একশ টাকা, আবার কারও কাছে ৯০, ৮০ এবং ৭০ টাকা দামে বিক্রি করছেন পরিদের।
পহেলা বৈশাখের আগে বরাবর নিউমার্কেটের গেটের সামনে জায়নামাজ বিক্রি করেন শাহাদাত। আজ ছোট ছোট পরিদের নিয়ে দোকানের পসরা সাজিয়েছেন। রাস্তায় একটি পলিথিন বিছিয়ে ছোটপরির দলকে সাজিয়ে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন তিনি। শাহাদাত জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত বছর ২৫০ থেকে ৩০০ পরি বিক্রি করেছিলাম। মূলত নববর্ষ উপলক্ষেই পরিদের দোকান করি। তাছাড়া আমি নিউমার্কেটের সামনের গেটে জায়নামাজ বিক্রি করি সারা বছর।’
তিনি আরও বলেন, উৎসবের দিন কাস্টমার কম থাকে বিধায় জায়নামাজ বিক্রিও হয় কম। তাই পরির দোকান দেই। পহেলা বৈশাখে গত বছরও দিয়েছিলাম, লাভ মোটামুটি ভালোই হয়। তবে এসব পরিদের কৈ তৈরি করেন তা তিনি বলতে পারেনি।
নববর্ষে উৎসবকে ঘিরে মার্কেটে মানুষ কম আসেন। এ দিনটিতে সবাই পরিবারের সদস্য বা অন্যদের নিয়ে ঘুরতে চান। তাই উৎসবের দিনে ছোট ছোট বাচ্ছাদের গিটারের দোকান নিয়ে রাস্তায় বসেছেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘এমনিতে আমরা পাইকারি সাপ্লাই দিয়ে থাকি। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে কম দামে বেশি জিনিস বিক্রি করার চিন্তায় এই দোকান নিয়ে বসেছি।’
গিটার সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যলয়ের পেছনের রাস্তায় বসছেন তিনি। তার কাছে খেলনা গিটারের দাম একশত টাকা।
সুর তোলার বাঁশি
আধুনিক যুগের কৃত্রিম সাউন্ড সিস্টেমের দাপটে সুদিন হারালেও হারিয়ে যায়নি বাঁশি ও এর মোহনীয় সুর। বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশের নানা প্রান্তে আয়োজিত বৈশাখী মেলাকে ঘিরে এখনো স্বমহিমায় বেজে উঠে সে সুর; জানান দেয় দেড়শ বছরের পুরনো ঐতিহ্য। আজ শাহবাগের রাস্তায় সেই বাঁশির দোকান নিয়ে বসেছেন সবুজ। তিনি বৈশখী উৎসবের মৌসুমি ব্যবসায়ী। সারা বছর অন্য কাজ করলে শুধু প্রতি বৈশাখে বাঁশির দোাঁন দেন। তার বাশির তাম ২০ টাকা থেকে ২৫-৩০ টাকার মধ্যে।
এসব দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বৈশাখী শুভেচ্ছা লেখা ছোট ছোট গামছার দাম ৩০ টাকা, শাড়ির দেড় থেকে ২০০ টাকা। চাল, ডাল, চিনি, তেল, লবণ, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য না হলেও উৎসবে পহেলা বৈশাখ ও বৈশাখেল শুভেচ্ছা লেখা খেলনা, শিশুদের হলুদ গামছা, ছোটদের শাড়ি এবং বিভিন্ন খেলনার সামগ্রী কিনছে মানুষ।
কাপড়, কাঁসা, পিতলের দোকান, হার্ডওয়্যার, কসমেটিকসহ বিভিন্ন ধরনের শতাধিক ব্যবসায়ী অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও বসেছেন রাজপথে। ঢাকা মহানগরীর রাজপথে বৈশাখী মেলায় বর্ণাঢ্য আয়োজন না হলেও দিনব্যাপী যেন এক মিলনমেলায় বর্ষবরণ উৎসব হয় এই রাজপথে।
রাস্তায় কয়েকটি দোকানে বিভিন্ন ডিজাইনের ছোটদের শাড়ি থেকে শুরু করে প্রসাধনী পণ্য যেমন- মালা, দুল, চুড়ি, আংটি, পায়েল, নুপুর, লেডিস ব্যাগ, লেডিস জুতা, থ্রি-পিস, টু-পিস, বয়স বিবেচনায় বিভিন্ন ধরনের ওড়না, ওয়ানপিস জামা, শিশুদের পোশাক, শার্ট, টি-শার্ট, স্যান্ডেল, ছাতা, ব্যাগ, প্রসাধনী সামগ্রী ও আরও অনেক ধরনের পণ্য রয়েছে এসব দোকানে। বিশেষত ছেলেদের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, ফতুয়া; মেয়েদের শাড়ি, জামা, থ্রি-পিস, ব্যাগ ইত্যাদির পণ্যৈর দোকানও আছে। তবে ছুটি ও উৎসবের এই দিনে শিশুদের জিনিসের দোকানে খুব বেশি ভিড় মানুষের।
এফএইচ/এসআর/এমএস