অনাচারের বিরুদ্ধে শুভবোধ জাগরণের আহ্বান
সামাজিক সব অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার মানস নিয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪২৬ সনকে প্রভাতী আয়োজনে বরণ করে নিলো ছায়ানট।
রোববার রমনার বটমূলের প্রভাতী আয়োজনে ‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’ আহ্বান নিয়ে সাজানো হয় ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন।
শিক্ষার্থী-শিক্ষক নিয়ে, ছোট বড় মিলিয়ে এবারের অনুষ্ঠানে সম্মেলক গান পরিবেশন করছে শ’খানেক শিল্পী। অনুষ্ঠানে শিল্পীরা পরিবেশন করেন ১৩টি একক ও ১৩টি সম্মেলক গান এবং ২টি আবৃত্তি।
ছায়ানটের আহ্বান অনুযায়ী রবীন্দ্র রচনা থেকে বেছে নেয়া হয়েছে আবৃত্তি দুটি। একই ধারায় গানগুলো নির্বাচন করা হয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, অতুলপ্রসাদ সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, রজনীকান্ত সেন, লালন শাহ্, মুকুন্দ দাস, অজয় ভট্টাচার্য, শাহ্ আবদুল করিম, কুটি মনসুর, সলিল চৌধুরী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা থেকে।
আয়োজনে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানার আগে ছায়ানট সভাপতি সানজীদা খাতুন শুভবোধ জাগরণের আহ্বান জানান তার কথনে।
ছায়ানট সভাপতির বক্তব্যের শেষে জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে সমাপ্ত হয় ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজন। এ ছাড়া বিকেলে রমনার বটমূলের উল্টা দিকে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ-১৪২৬ উদযাপন উপলক্ষে গান নৃত্য ও বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশনা করা হবে। প্রতি বছরের ন্যায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা।
জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করেছে বাঙালি জাতি। পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতেছে দেশ। চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৫ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হয়েছে নতুন বছর ১৪২৬।
১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে, কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে।
পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।
দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পয়লা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
এফএইচ/জেএইচ/এমএস