সংস্কৃতি বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে
দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বাঁচাতে হলে দেশের নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
শুক্রবার রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে ইরান কালচারাল সেন্টার আয়োজিত ইরানি নওরোজ (নববর্ষ) ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবকিছু ইট-পাথর দিয়ে ঘেরা হয়ে গেলে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি দুর্বল হয়ে যাবে। আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হলে প্রকৃতিকে বাঁচাতে হবে। নদীকে বাঁচাতে হবে। আমাদের গ্রামগুলোকে বাঁচাতে হবে।
উন্নত দেশের সঙ্গে উন্নত প্রকৃতির সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নিয়ে গেছেন। উন্নত দেশের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। দেশ ও প্রকৃতি কীভাবে রক্ষা হবে তার জন্য তিনি ডেল্টা প্ল্যান দিয়েছেন। নদী রক্ষার কথা তিনি দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। আমরা মনে করি, এ দেশের সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে হলে দেশের নদীকে রক্ষা করতে হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে মেলে ধরার জন্য, রক্ষা করার জন্য ইতোমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আপনারা যারা ঢাকার মানুষ তারা দেখতে পেরেছেন, আমরা বড় একটি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। ঢাকার নদীগুলোকে দখল করা হয়েছিল, তার নাব্যতা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল; নদী দূষণ হয়েছিল। আমরা ইতোমধ্যে একটা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। পাঁচ, তিন ও দুই বছর মেয়াদি। আমরা বুড়িগঙ্গা, বালু, শীতলক্ষা ও তুরাগে পুরাতন আবহ ফিরিয়ে আনব।
নদী তীর উচ্ছেদে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, জনসমর্থন ছাড়া কোনো কাজ হয় না। মুক্তিযুদ্ধে আমরা জয়লাভ করেছিলাম, সেটা জনযুদ্ধ ছিল বলে। জনগণের আকুণ্ঠ সমর্থন ছিল বলেই আমরা দুর্গম গিরি পারি দিয়েছি। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রকৃতিকে রক্ষা করা; বাংলাদেশের নদীগুলোকে রক্ষা করা। সেখানে আপনার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন। নতুন বর্ষে আপনাদের কাছে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
ইরানি নওরোজ বিষয়ে তিনি বলেন, পারস্য সাহিত্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ইরান খুব মেধাবী একটি দেশ। মেধাবী একটা জাতি। পারস্য সংস্কৃতি ধরে রেখে সমগ্র পৃথিবীর সঙ্গে একটি সাংস্কৃতিক আবদ্ধ তৈরি করতে চাই। তাদের এ পদক্ষেপকে বাংলাদেশ সবসময় স্বাগত জানায়। আমরা চাই, বাংলাদেশে জাতিগতভাবে আমরা যা অর্জন করেছি- মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাধ্যমে- কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়; সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব- আমরা সেই বন্ধুত্ব ধরে রাখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মহান নেত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নয়; তাবত দুনিয়ার শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য কাজ করছেন। সমগ্র পৃথিবীর মানবতা যেখানে বিপর্যস্ত হয়েছে; আমাদের দেশের মানুষের পক্ষ থেকে পৃথিবীর মানুষের জন্য মানবতার পতাকা তিনি তুলে ধরেছেন। সমগ্র পৃথিবীতে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। জাতিগতভাবে আমরা আনন্দিত হয়েছি। প্রতিটি দেশের সংস্কৃতিকে মর্যাদা দেয় বাংলাদেশ। কারণ, আমাদেরও একটা বর্ণাঢ্য সংস্কৃতি আছে। আমরাও সেটাকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চাই। ইরানের নওরোজ এবং বাংলাদেশের নববর্ষ একত্রে উদযাপনে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সম্মান ফুটে উঠেছে। আমরা চাই নতুন বছরে আমাদের যেন কোনো অশান্তির বাতাস স্পর্শ না করে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যেন শান্তিতে থাকে।
শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অতিথি অধ্যাপক ড. কাযেম কাহদুয়ী, বিশিষ্ট নাট্য পরিচালক অভিনেতা মামুনুর রশীদ, ইরান কালচারাল সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত কাউন্সিলর মেহেদী হাসান।
এইউএ/জেডএ/পিআর