‘স্কুলে শিশুদের খাবারে বিনিয়োগে কোনো লস নেই’
স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম প্রকল্পে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং বলেছেন, ‘প্রত্যেক বিনিয়োগের একটা সন্দেহ থাকে-লাভ হবে কি হবে না। কিন্তু এই বিনিয়োগের কোনো লস (ঘাটতি) নাই।’
আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘জাতীয় স্কুল মিল নীতি-২০১৯’ চূড়ান্ত করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এক জাতীয় কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিয়ে এ মন্তব্য করেন বাহাদুর উশৈসিং।
তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক বিনিয়োগে জিনিস চলবে কি চলবে না-সন্দেহ থাকে। কিন্তু এই বিনিয়োগে এই প্রতিষ্ঠান থেকে, এই ফ্যাক্ট্ররি থেকে যে জিনিসটা বের হবে-সেটা হবে আমার সমাজের জন্য, পরিবারের জন্য, ধর্মের জন্য, রাষ্ট্রের জন্য, বিশ্বের জন্য কল্যাণকর। এই শিশুরাই শিক্ষায়, দিক্ষায় পরিপূর্ণ হয়ে বেরিয়ে আসবে। এই বিনিয়োগে কোনো জাতি-ধর্ম-বর্ণ কিছুই নাই্। দেশে এর কোনো সীমানা নাই। তাহলে সেখানে আমরা বিনিয়োগ করব না কেন?’
জাতীয় স্কুল মিল নীতি প্রণয়ন করতে এর আগে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেসব কর্মশালার বাস্তব মতামত ও সুপারিশের আলোকে নীতিটির খসড়া চূড়ান্ত করে আজ উপস্থাপন করা হয়। আজকের উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত করা হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রীসহ সরকারের চার মন্ত্রী এই কর্মশালায় অংশ নেন। এ ছাড়া সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিদেশি সংস্থার কর্তাব্যক্তিরাও এতে অংশ নেন। শিশুদের শ্রেণিকক্ষে মনোযোগী, বিদ্যালয়ে আসতে উৎসাহী, তাদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন তারা।
এ সময় স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম প্রকল্পের পরিচালক রুহুল আমিন খান বলেন, ‘বর্তমানে দেশের চারটি দরিদ্র জেলায় স্কুল ফিডিংয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২৯ লাখ ৩০ হাজার ছাত্রছাত্রীকে উচ্চমানসম্পন্ন বিস্কুট সরবরাহ করা হচ্ছে।’ এই নীতি চূড়ান্ত হলে এটি মানসম্মতভাবে বাস্তবায়ন, স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত ও স্থানীয় অর্থনীতি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই প্রকল্প পরিচালক।
এই কর্মশালায় প্যানেল আলোচনারও আয়োজন করা হয়। এর সঞ্চালনা করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। এ সময় তিনি বলেন, ‘প্রথমে দেশে আংশিকভাবে বিনামূল্যে বই দেয়া শুরু হয়। এখন দেশের সব শিশুর হাতেই বিনামূল্যে বই তুলে দেয়া সম্ভব হচ্ছে। একইভাবে শিশুদের মধ্যে খাবারও তুলে দেয়া সম্ভব। সরকারি অর্থায়নেই এটা পর্যায়ক্রমে সম্ভব।’
কর্মশালায় বক্তারা জানান, এই প্রকল্পের জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে। তবে এ প্রকল্পে টাকা-পয়সার কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
তিনি বলেন, ‘আমার কথা হলো-সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় আমরা সবাই এটাকে সমর্থন করি। কারণ আমাদের যিনি প্রধান, তিনি চান এটা হোক। আমি প্রধানমন্ত্রীর মন বুঝেই এ কথা বলছি। টাকা-পয়সায় সমস্যা হবে না। আমাদের টাকা-পয়সা আছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় যে কাজটা করছে, এটা আরও শক্তভাবে করবেন। আমার নিজের মন্ত্রণালয় থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি।’
এম এ মান্নান আরও বলেন, ‘রোমান্টিক একটা আইডিয়া ছিল যে, সবাই জমায়েত হয়ে রান্নাবান্না করে বাচ্চাদেরকে টিফিনে খাওয়াবে। কিন্তু এটা বাস্তবসম্মত নয়।’ তিনি স্কুলের শিশুদের বিস্কুট, কলা, ডিম – এসব খাবার দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। তবে এক্ষেত্রেও সবাইকে মিলে সিদ্ধান্ত নেয়ার পরামর্শ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
এ সময় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশংসনীয় উদ্যোগ। স্কুল মিল সাধারণ খাবার নয়। এটাকে বিচার করতে হবে পুষ্টিমানের বিবেচনায়। স্কুল মিল মানে শিক্ষার্থীদের জন্য পুষ্টিমান খাবার নিশ্চিত করা। যা তাকে শিক্ষায় মনোনিবেশ করতে সাহায্য করবে।’
তিনি বলেন, ‘এখানে পরিকল্পনামন্ত্রী রয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। এই স্কুল মিল পরিচালনার জন্য যে ৮ হাজার কোটি টাকা লাগবে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে তিনি এই পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। আমি পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি, আমরা দু’জন শুধু সমর্থন নয়; প্রয়োজনে পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসতে রাজি আছি।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয় প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি আজকে আপনাদেরকে বলব, আসেন পর্যায়ক্রমে প্রত্যেকটি স্কুলে এই কার্যক্রম পরিচালনা করি। তাহলে স্কুলে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়া বন্ধ হবে, স্কুলে আসার প্রবণতা বাড়বে। আমাদের শিক্ষক স্বল্পতা আছে, ইতোমধ্যে নিয়োগের ব্যবস্থা করছি। পাশাপাশি অফিস সহকারী নিয়োগের ব্যবস্থাও করছি।’
জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘আমরা যত বড় বাংলাদেশ বানাই, যত সুন্দর বাংলাদেশ বানাই, ভিত্তি যদি আমরা দুর্বল করে ফেলি, ওই বাংলাদেশ টিকবে না।’
সেই ভিত্তি শিশুদেরকে পুষ্টিকর খাবার দেয়ার মাধ্যমে শারীরিকভাবে সুস্থ ও শিক্ষিত করে গড়তে স্কুল খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম বলে উপস্থিত সবাই একমত হন।
পিডি/এসআর/পিআর