দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন ওরা

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০১৯
আহত একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে

বনানীর এফআর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি প্রায় সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। রাজধানীর সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৩০ আহতের মধ্যে মাত্র দুজন ছাড়া সকলেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এফআর টাওয়ারে অগ্নিদগ্ধ ও আহতরা সর্বোচ্চমানের চিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

তাদের মধ্যে এখনও দুজন চিকিৎসাধীন। তারা হলেন- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে অনুপম দেবনাথ (৩৪) ও ক্যাজুয়ালটি বিভাগে চিকিৎসাধীন রেজাউল (৪০)। অনুপমের শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে গেছে এবং রেজাউলের পায়ের হাড়ে একাধিক ফ্রাকচার রয়েছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ ও বার্ন ইউনিটের কয়েকজন চিকিৎসক জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেও তাদের অনেকেই বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকা সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা ভুলতে পারছেন না। ফলে চিকিৎসকরা তাদের স্বজনদের ডেকে প্রয়োজনে মানসিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেছেন।

গত ২৮ মার্চ বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউর ২৩ তলা এফআর টাওয়ারের ৭, ৮ ও ৯ তলায় আগুন লাগার পরপরই আতঙ্কিত লোকজন প্রাণ বাঁচাতে বিভিন্ন তলা থেকে নিচে নামার চেষ্টা করেন। আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই কেউ কেউ নিচে নামতে পারলেও আগুন এবং ধোঁয়ার কারণে অনেকেই বিভিন্ন তলায় আটকা পড়েন।

অনেকেই ভবনের উপর থেকে প্রাণ বাঁচাতে রশিতে বা বিদ্যুতের তারে ঝুলে নিচে নামার চেষ্টা করেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিচে নামতে গিয়ে ঘটনাস্থলেই কয়েকজন মারা যান। অনেকে গুরুতর আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আহতদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ১১ জন, বার্ন ইউনিটে ৭ জন, কুর্মিটোলা ৫০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৪৪ জন, ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১২ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৩ জন, ইউনাইটেড হাসপাতালে ৩২ জন, অ্যাপোলো হাসপাতালে ১০ জন, বনানী ক্লিনিকে ২ জন, শাহাবুদ্দিন মেডিকেল হাসপাতালে ৭ জন, সিটি হাসপাতাল একজন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতাল একজন চিকিৎসা নিয়েছেন।

তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে একজন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের আইসিইউতে একজন ও হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে একজন এবং উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের আইসিইউতে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। আশঙ্কাজনক চারজনের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহেল রানাকে (২৪) উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়া হলেও আজ (সোমবার) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাকে নিয়ে বনানীর ঘটনায় মোট ২৭ জন মারা গেলেন।

নিহতদের নাম-পরিচয়

রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শ্রীলঙ্কার নিরস বি কে রাজা ও আবু হেনা মোস্তফা কামাল (৪০), অ্যাপোলো হাসপাতালে মৌলভীবাজারের সামিনা ইয়াসমিন (৪৮), বনানী ক্লিনিকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী পারভেজ সাজ্জাদ (৪৬), ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চাঁদপুরের আব্দুল্লাহ আল ফারুক (৬২), রংপুরের মোস্তাফিজুর রহমান (৩৬), খুলনার মিজানুর রহমান লিটন (৩৪) চাঁদপুরের আতাউর রহমান (৬২), রংপুরের ফরিদা খানম (৪৫) মারা যান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান ৯ জন। তারা হলেন- শরীয়তপুরের মির্জা আতিকুর রহমান (৪২), পাবনার আমির হোসেন রাব্বি (২৯), কুষ্টিয়ার ইফতিয়ার হোসেন মিঠু (৩৭), যশোরের জারিন তাস্নিম বৃষ্টি (২৫), লালমনিরহাটের আঞ্জির সিদ্দিক আবির (২৭), নওগাঁর মঞ্জুর হোসাইন (৪৯), নারায়ণগঞ্জের ফজলে রাব্বি (৩০) ও আহমেদ জাফর (৫৯) এবং নীলফামারির রুমকি আক্তার (৩০)।

রাজধানীর কুর্মিটোলা ৫শ’ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নোয়াখালীর জেবুন্নেছা (৩০), মগবাজারে সালাউদ্দিন মিঠু (২৫), বগুড়ার তানজিলা মৌলি (২৫), চাঁদপুরের রেজাউল করিম রাজু (৪০) ও টাঙ্গাইল মির্জাপুর নাহিদুল ইসলাম তুশার (৩৫) মারা যান।

এছাড়া রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ঢাকা গেন্ডারিয়ার মাকসুদুর রহমান (৩২), মিরপুর ঢাকা মনির হোসেন (৫২) ও দিনাজপুরের আব্দুল্লাহ আল মামুন (৪০) মারা যান।

এমইউ/আরএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।