ভবনে ইমারজেন্সি এক্সিট না থাকলে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:২১ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০১৯

প্রতিটি ভবনে ইমারজেন্সি এক্সিট রুট বা দুর্ঘটনার শিকার হলে জরুরিভিত্তিতে ভবন থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা না করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম।

পুরান ঢাকার চুরিহাট্টা ও বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুনের ভয়াবহতার পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার (৬ এপিল) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘ইমারত নির্মাণে সরকারের দায়িত্ব ও নাগরিকের করণীয়’ শীর্ষক মিট দ্য প্রেস আয়োজন করা হয়।

এ সময় ভবনকে নিরাপদ ও মানুষের জীবন রক্ষার্থে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নেয়া প্রাথমিক পর্যায়ের পরিকল্পনা তুলে ধরেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘কোনো ভবনে জরুরিভাবে বের হওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আবার কোনো কোনো ভবনে সেই রাস্তাটাই করা হয়নি। সেই ইমার্জেন্সি এক্সিট (জরুরিভিত্তিতে বের হওয়ার রাস্তা) যে ভবনে নেই, তাদের আমরা নির্ধারিত সময় বেঁধে দেব। তাদের সেই সময়ের ভেতরে তা করতে হবে। যে ভবনে থাকার পরও ব্যবহার করছেন না, তাদেরও ব্যবহার করার জন্য সময় দেব। ’

এ সময় আরও কিছু পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন রেজাউল করিম।

মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো কোনো ভবন আছে, যেগুলো অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। তাদের আমরা একটি নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়ে বলব, এ সময়ের ভেতরে বিল্ডিং কোডে যে ব্যবস্থা অনুমোদন করা হয়েছে, সে জাতীয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা সম্পৃক্ত করতে হবে। করার পর আমরা আবার পরিদর্শনে লোক পাঠাব। তারা দেখে সনদ দেয়ার পরে আমরা সেই বিল্ডিংকে ব্যবহার উপযোগী ঘোষণা করব।’

‘যে ভবনে গ্যারেজের জায়গা দখল করে অথবা সিঁড়ির প্রশস্ত জায়গা দখল করে বা কমন স্পেস দখল করে আলাদা স্থাপনা করা হয়েছে, তাদের নির্ধারিত সংক্ষিপ্ত সময় দেয়া হবে। সেসব স্থাপনা সরিয়ে নিয়ে বিল্ডিং কোডের আওতায় সেসব স্থাপনা করতে হবে,’ যোগ করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী।

অবৈধভাবে ঊর্ধ্বমুখী ভবন নির্মাণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যারা ঊর্ধ্বমুখী ইমারত নির্মাণ করেছেন আমাদের অনুমোদন ছাড়া, তাদের ক্ষেত্রে আমার পরিষ্কার কথা থাকবে, সরিয়ে নিতে হবে।’

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে ঊর্ধ্বমুখী ভবন করেছেন, তারা যদি সেই অংশটাকে আধুনিক নির্মাণ প্রযুক্তির মাধ্যমে আলাদা পিলার করে, আলাদাভাবে শক্তিশালী অবস্থানে দাঁড় করাতে পারেন, সেটাকে আমরা একটা নির্ধারিত ব্যবস্থার অধীনে নিয়ন্ত্রণ করব। যদি দেখা যায় যে, ভবনেরই ক্ষমতা নেই, উপরের দুটি ফ্লোর কোনো রকমে দাঁড় করিয়ে ধরে রাখার মতো অবস্থা, আলাদা প্রযুক্তি দিয়ে সম্ভব নয়, সেটা তাদের সরিয়ে নিতে হবে।’

এ ক্ষেত্রেও নির্ধারিত সময় দেয়া হবে। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা সরিয়ে না নেন, সেক্ষেত্রে সবার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান মন্ত্রী।

s.-m-razual-karim-2)

পরিদর্শন ও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না- এমন অভিযোগের বিষয়ে রেজাউল করিম বলেন, এ দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি অভিযোগটা সত্য। এবার আমরা ইনকুয়ারি ও পরিদর্শনের প্রতিবেদন, কার কার ইমারতে কী কী সমস্যা আছে, সেটা জাতীয় দৈনিক, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ করব। প্রয়োজনে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশ করব।

তিনি বলেন, এসব মানুষের স্বরূপ সবার জানা উচিত। অনেকে আছেন রাজনৈতিক নেতা, অনেকে সামাজিক নেতা, কেউ আছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, কেউ আইনজীবী, কেউ চিকিৎসক। এ রকম নানা ব্যক্তি শ্রেণির মানুষে আছেন। তারা সমাজে দেখতে খুবই সুন্দর। কিন্তু তারা যে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকির কাজগুলো করে নিজের অর্থ লিপ্সাটাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন, তাদের স্বরূপ আমরা মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাই।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও দায়ী করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বনানীতে যে ঘটনাটা ঘটল, সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। সেখানে তিন শ্রেণির মানুষ জড়িত। প্রথমত লোভী মালিক, লোভী ডেভেলপার এবং ডেভেলপমেন্টের কাজ দেখভাল করার দায়িত্ব যাদের ছিল, অর্থাৎ ওই অঞ্চলে রাজউকের যেসব কর্মকর্তা, পরিদর্শক, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তাদের চোখ বন্ধ করে থাকা। অপরাধের চিহ্ন পাওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেয়া। তাদেরও দায়ী করা হবে। কারণ তাদের জনগণের করের টাকায় বেতন দেয়া হয়। যখন ভবনগুলো হয় তখন কী তারা চোখে চশমা পরে থাকে। নাকি অন্য কোনো কারণে দায়িত্ব পালন করেননি, সেটাও আমরা খতিয়ে দেখব। অপরাধী শুধু নির্মাতা নন, যার দেখার দায়িত্ব ছিল, তিনিও অপরাধী।

ভবনগুলো পরিদর্শন করতে ইতোমধ্যে ২৪টি পরিদর্শন দল গঠন করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তারা প্রথম পর্যায়ে শুধু বহুতল ভবনকে পরিদর্শন করে তদন্ত প্রতিবেদন দেবে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করা হয়েছে। যেখানে সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি রয়েছেন।

রাজউক থেকে একটি টিম গঠন করা হয়েছে তদন্তের জন্য। আমরা সব প্রতিবেদন নিয়ে একত্রে বসব। বসে এ জাতীয় বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ, অর্থাৎ নগর পরিকল্পনাবিদ, পরিবেশবিদ, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, আইনজীবী, সিটি কর্পোরেশন, রাজউকের প্রতিনিধিদের নিয়ে বসব। এগুলো বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান সরকারের এ মন্ত্রী।

তবে কোনোভাবেই এ বিষয়টা ঝুলিয়ে রাখা হবে না বলেও জানান মন্ত্রী রেজাউল করিম।

পিডি/এনডিএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।