সবার বিনিয়োগের সুযোগ দিতেই অর্থনৈতিক অঞ্চল
দেশি-বিদেশি-প্রবাসী যারাই আসবে তারা যেন বিনিয়োগ করতে পারে সে সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে বুধবার (৩ এপ্রিল) ভিডিও কনফারেন্সে বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সূচনা বক্তব্যে এসব জানান তিনি।
১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন, ১৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ১৬টি বাণিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম, ২০টি শিল্প কারখানার ভিত্তি স্থাপন ও ৫টি চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের জমির স্বল্পতা আছে, আমার খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। আমার কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। আবার পাশাপাশি শিল্পায়ন একান্তভাবে প্রয়োজন। শিল্পায়ন ছাড়া একটা দেশ কখনো উন্নয়ন হয় না। আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। কিন্তু সেই কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে কৃষি আমাদের প্রয়োজন। সেই সঙ্গে আমাদের শিল্পায়নও প্রয়োজন। সে কথা চিন্তা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সারা বাংলাদেশে ১০০টা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলব। যেখানে দেশি-বিদেশি সব ধরনের বিনিয়োগ হবে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্পায়ন কোথায় হবে, কীভাবে হবে সেই জায়গা আমরা ঠিক করে দেব। যত্রতত্র আমার কৃষিজমি নষ্ট হবে না। তিন ফসলের জমি সেগুলো নষ্ট হবে না। আমরা গবেষণা করে করে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো শুরু করেছি। বাংলাদেশকে আমাদের ক্ষুধামুক্ত করতে হবে, দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে। খাদ্য উৎপাদন আমাদের বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দেশটা যেকোনো সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়, এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক সময় আমাদের ফসল নষ্ট হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ দুর্যোগকালে আমাদের খাদ্য মজুত করতে হবে। আবার যেন কারো কাছে হাত পাততে না হয়, আমরা যেন নিজেরা মর্যাদা নিয়ে থাকতে পারি সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। সে লক্ষ্য নিয়ে আমাদের এ পরিকল্পনা ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেয়া। সেখানে আমাদের দেশি, বিদেশি, আমাদের প্রবাসী যারাই আসবে তারা যেন বিনিয়োগ করতে পারে সেই সুযোগটাও সৃষ্টি করে দেয়া। একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে যদি আমরা এগুতে থাকি, তাহলে যেকোনো একটা দেশকে উন্নত করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বেসরকারি খাত এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তরুণ সমাজ তারা যে, বিশেষ করে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটা শিল্পায়নের ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে, আমি এ জন্য প্রশংসা করি। অনেক তরুণ মুখ আমরা আজকে দেখি যারা কাজ করে যাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মাত্র একটা এয়ারপোর্ট ছিল আন্তর্জাতিক। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে আরও দুটো আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট করে দেই। আমরা আরেকটা এয়ারপোর্ট ভালো করে দিচ্ছি কক্সবাজারে। ঢাকারটায় আমরা থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করেছি। সৈয়দপুর এয়ারপোর্টকে আমরা উন্নত করে দিচ্ছি। রাজশাহী এয়ারপোর্ট আমরা চালু করেছি। বরিশাল চালু করেছি, এগুলো এক সময় বন্ধ ছিল। বিমানের যে বিধ্বস্ত অবস্থা ছিল এখন অন্তত আমরা ড্রিম লাইনার নিয়ে এসেছি।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১৩ ভাগে উত্তীর্ণ হবে এ অর্থবছরে। আমাদের মাথাপিছু আয়ও আমরা ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত করছি। আমাদের অর্থনীতিটাকে সব সময় গতিশীল, কিন্তু এটা যেন স্থিতিশীল থাকে সে ব্যবস্থাটা আমরা রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের উন্নয়নটা হচ্ছে একেবারে তৃণমূল মানুষের কাছে। মানুষের যেন ক্রয় ক্ষমতাটা বাড়ে এবং দেশে যেন আমার বাজার সৃষ্টি হয় সেই চেষ্টা ও সেই পদক্ষেপ নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থাটা এমন চমৎকার একটা জায়গায় এখন থেকে বিশ্বের পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ সব জায়গায় যাওয়া যাবে। প্রতিটি জায়গায় একটা ভালো মার্কেট পাওয়া যাবে। সেই সুযোগটা আমাদের রয়েছে। সেভাবে আমরা সমুদ্র বন্দর করে দিচ্ছি, গভীর সমুদ্র বন্দর আমাদের তৈর হচ্ছে। সব দিক থেকেই আমরা কিন্তু এগিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে সুযোগটা সৃষ্টি করে দেয়া। আমাদের সব কাজের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে কর্মসংস্থান। আমার দেশের কোনো তরুণ বেকার থাকবে না। তারা ট্রেনিং পাবে, পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। বহুমুখী শিক্ষা, আমাদের প্রয়োজনীয় বিশ্ববিদ্যালয় আমরা বিষয়ভিত্তিক করে দিচ্ছি।’
এইউএ/এনডিএস/আরআইপি