প্রতিবন্ধীদের তৈরি ‘মুক্তা পানি’ সবাইকে কিনতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৭:৩৫ পিএম, ০২ এপ্রিল ২০১৯

অটিস্টিকদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নিজেদের প্রতিভা দিয়ে এরা অনেক কিছু তৈরি করতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ‘মুক্তা পানি’ মিনারেল ওয়াটারের বোতল হাতে নিয়ে অনুষ্ঠানের সবাইকে দেখিয়ে বলেন, এটিও কিন্তু আমাদের প্রতিবন্ধীরাই তৈরি করছে।

‘এত সুন্দর পানি এত সুন্দর বোতল আমার অফিসে বারবার বলার পরে আমার জন্য কিছু বোতল আনা হয়, অন্যরা ব্র্যান্ডের পানি খায়।’

আজকের পর তিনি এই পানি কেনার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননও বক্তব্য দেন।

এতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ স্বাগত বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ।

অটিজম ও প্রতিবন্ধীদের বিষয়ে বিশেষ অবদান রাখা ও প্রতিবন্ধীদের কৃতিত্বপূর্ণ কাজের জন্য ১১ জনকে পুরস্কার দেয়া হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নীল বাতি প্রজ্বলন করেন। এ সময় বেজে ওঠে ‘আমরা করব জয়’ গানটি।

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘সহায়ক প্রযুক্তির ব্যবহার, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তির অধিকার’।

প্রতিবন্ধীদের বহুমুখী প্রতিভার উদাহরণ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা প্লাস্টিক এবং বেত দিয়ে মোড়া তৈরি করছে, নানা সাংসারিক উপকরণ তৈরি করছে। তিনি সুযোগ পেলেই এগুলো সংগ্রহ করেন এবং ব্যবহার করেন বলেও জানান। তার নাতীপুতিদেরও এগুলো যত্নসহকারে ব্যবহান করতে বলেন।

প্রতিবন্ধীদের মেধাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রেও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের আপনারা যদি একটু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন তাহলে তাদের জীবনটাও অর্থবহ হয়। তারা যতটুকু সুযোগ পায় সেটাকে কাজে লাগাতে পারে।

প্রতিবন্ধীদের জন্য তার সরকার এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় আধাঘণ্টা  সময় বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা যতটা সময় পায় তার থেকে প্রতিবন্ধীরা একটু বেশি সময় পায় এজন্য যে, তারা যেন পরীক্ষাটা ঠিকমতো দিতে পারে। কারণ, তারা অন্য সবার মতো একই সঙ্গে লিখে শেষ করতে পারে না।

তিনি জানান, প্রতিবন্ধীদের চিত্রাঙ্কন থেকে তৈরি কার্ড দিয়ে তার মেয়ে এবং বিশ্ব অটিজম আন্দোলনের অগ্রপথিক সায়মা ওয়াজেদ হোসেন একটি অ্যালবাম তৈরি করেছেন। যেটি তার সরকার উপহারস্বরূপও বিভিন্ন জায়গায় পাঠাচ্ছে।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২ এপ্রিলকে বিশ্বব্যাপী অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অটিজম শিশু জন্মানোর ক্ষেত্রে মা-বাবা কারোরই কিছু করার থাকে না। তথাপি আমাদের সমাজে এজন্য মাকেই যে দোষারোপ করা হয়, সেটি বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আশা করি কেউ আর অযথা মাকে কোনোভাবে দোষারোপ করবেন না। কারণ, এতে মায়েরও কষ্ট। আল্লাহ মানুষটাকে এভাবে তৈরি করেছেন কাজেই তাকে অবহেলা করা কোনো সুস্থ মানুষের কাজ নয়।’

‘প্রতিবন্ধী মানুষগুলোর প্রতি আমাদের আরো সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত, আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিত’ -বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি এটুকুই চাইব এই অবহেলিত গোষ্ঠী যেন আর অবহেলার শিকার না হয়, তারা যেন আমাদের সমাজে তাদের যোগ্য স্থান পায়। কারণ তারা আমাদেরই ভাই-বোন, আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই সব। সেকথা মনে করে, সবাই এই প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে মিলে চলবেন, সেটাই আমি চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর সরকার সমাজকল্যাণ পরিদফতরের মাধ্যমে দেশের ৪৭টি সাধারণ বিদ্যালয়ে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সমন্বিত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়। সে সময়ের বাস্তবতায় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মূলধারার বিদ্যালয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম ছিল প্রগতিশীল, যুগোপযোগী ও কার্যকর একটি পদক্ষেপ।

শেখ হাসিনা বলেন, সত্যি কথা কি আমি আগেও এটা সম্পর্কে এত কিছু জানতাম না। আমার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেনের (অটিজম সম্পর্কিত জাতীয় উপদেষ্টা কাউন্সিলের চেয়ারপারসন) কাছ থেকেই প্রথমে এ সম্পর্ক জানতে পারি এবং তারপর থেকেই এ রোগে আক্রান্তদের সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করছি, যার জন্য এখন বাংলাদেশেই শুধু নয়, বিশ্বব্যাপীও সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে।

সব ধরনের প্রতিবন্ধীদের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তাদের জন্য কর্মংস্থানের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় ব্যক্তি খাতের উদ্যোক্তা এবং সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসায় আহ্বান জানান।

পরে অটিস্টিক শিশুদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এফএইচএস/জেডএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।