সরকারি সম্পত্তি ফিরিয়ে দিন, না হলে কঠোর পরিণতি

বিশেষ সংবাদদাতা
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৫:২৫ পিএম, ৩১ মার্চ ২০১৯

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, যেসব দুর্নীতিবাজ সরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে ভোগদখল করছেন, নদী দখল করেছেন, লুটপাট করে সম্পত্তি গ্রাস করেছেন; এসব জনগণের সম্পত্তি ত্যাগ করুন, না হলে আপনাদের জন্য কঠোর পরিণতি অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ, বাংলাদেশ রেলওয়ে কিংবা বন বিভাগের সম্পত্তি দখল করে রেস্ট হাউজ বানিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী সরকারের সম্পত্তি সরকারের কাছে সমর্পণ করুন। যারা অনিয়মের মাধ্যমে জনগণের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন অথবা যারা অর্থ দিয়েছেন- এসব অর্থ লোপাটকারীও আইনের আওতায় আসবে।

রোববার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটোরিয়ামে শ্রেষ্ঠ দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি, বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিজয়ী, দুদক মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড প্রদান ও সততা সংঘের সমাবেশে সভাপতির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সততা সংঘ ও সততা স্টোর পরিচালনা দুদকের একার কাজ নয়। এটা আমাদের সবার কাজ। এক্ষেত্রে মিডিয়া, সুশীল সমাজসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সমন্বিতভাবেই দুর্নীতিবিরোধী চেতনার বিকাশ সাধন করতে হবে। আজ কেন যেন মনে হয় অনিয়মকে সবাই নিয়মে পরিণত করছে। এই নিগড়ে আমরা সবাই বাঁধা পড়েছি। বনানীর বিয়োগাত্মক ঘটনা এই সব অনিয়মের পরিণতি।

এ জাতীয় অনিয়মকে দুর্নীতি অবহিত করে দুদক চেয়ারেম্যান বলেন, সময়মতো কাজ করবেন না এটাও দুর্নীতি। ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক আগেই কাজ শুরু হয়েছে, এবার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কাজ শুরু হবে। ১৮ তলা ভবনের অনুমোদন পেল, বানালেন ২২ তলা। এই অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ক্ষমা হবে না। এভাবে জনগণের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আর সহ্য করা ঠিক হবে না। এদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে দুদক কাজ করছে, তবে এ কথাও ঠিক কমিশনের একার পক্ষে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। কেন সম্ভব নয় প্রশ্ন করে তিনি বলেন, একটি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সব কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা কমিশনের ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে লিখবেন, আমাদের গঠনমূলক সমালোচনাকে আমরা সর্বদাই স্বাগত জানাই।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতা নিয়েও আমরা সততা সংঘ এবং সততা স্টোর নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সীমিত অর্থ দিয়ে প্রতিটি সততা সংঘের সদস্য যাতে সাংবাৎসরিক ভিত্তিতে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

সমাজশক্তির অংশগ্রহণ ছাড়া এ জাতীয় কার্যক্রম বিকশিত হয় না জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আসুন সম্মিলিতভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং নৈতিক মূল্যবোধ বিকাশের সামাজিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করি।

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে শিক্ষকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জিম্মাদার, আপনারা আমাদের জিম্মি করবেন না। কোচিং বাণিজ্য ও নোট বাণিজ্য থেকে আমাদের শিক্ষাকে মুক্ত করুন। আমাদের নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি গঠনে আপনারা কার্যকর ভূমিকা রাখুন। মূল্যবোধহীন উন্নয়ন কখনই টেসকসই উন্নয়ন হয় না।

সরকারের উদ্দেশে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির ফাঁক-ফোঁকড় যাতে না থাকে তার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করুন। প্রকল্প বা জন-কর্মসূচিতে দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন সহযোগিতা করতে প্রস্তত। দুর্নীতি প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।

অনষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী। আরও বক্তব্য রাখেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখ্ত, দুদক মিডিয়া জুড়ি বোর্ডের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিতার্কিক আলিফ আল জামাল, সততা সংঘের সদস্য সঞ্চিতা রহমান মিম, নেত্রকোনা জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ খান, সাভার উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দীন নাঈম, প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে দুদক মিডিয়া আ্যওয়ার্ড বিজয়ী ও প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার মো. ফখরুল ইসলাম হারুন, ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে বিজয়ী মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও এএফএম আমিনুল ইসলাম।

উল্লেখ্য, এবারের দুদক মিডিয়া আ্যওয়ার্ড বিজয়ী সাংবাদিকরা হচ্ছেন- যথাক্রমে ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকারী মাছরাঙা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি বদরুদ্দোজা বাবু, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ৭১ টিভির সিনিয়র রিপোর্টার পারভেজ নাদির রেজা এবং প্রিন্ট ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছেন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার ফখরুল ইসলাম হারুন এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছেন দৈনিক সমকাল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি হকিকত জাহান হকি। প্রথম পুরস্কার হিসেবে রয়েছে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট এবং দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে রয়েছে নগদ ৪০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট।

এমইউ/বিএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।