শহীদের রক্তের প্রতি ফোঁটার দাম দিতে হবে : বিজয় বসাক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম
প্রকাশিত: ০৯:৫১ পিএম, ২৭ মার্চ ২০১৯

‘বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চিতে একজন করে শহীদের রক্ত রয়েছে, আমি বিশ্বাস করি। মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের প্রতিটি ফোঁটার দাম আমাদেরকে দিতে হবে। আমরা যদি এই জায়গাটিতে বেইমানি করি, তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে আমরা আমাদের মায়ের সঙ্গে বেইমানি করছি। স্বর্গের চেয়েও কিন্তু জন্মভূমির দাম বেশি। আমরা যদি একসঙ্গে কাজ করি, অবশ্যই আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে পারব।’

‘স্বাধীনতার গল্প শুনি’ শিরোনামে সায়েন্টিস্ট জামাল নজরুল ইসলাম একাডেমির এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক। বুধবার সকালে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানার অধীন মুরাদপুর মোড়ের অদূরে একাডেমি প্রাঙ্গণে আয়োজিত উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা।

২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। কীভাবে সেই ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, তা শিশুদের জানান বিজয় বসাক। এই প্রজন্মের শিশুরাও আগ্রহ নিয়ে শুনেছে মুক্তিযুদ্ধের নানা গল্প।

পুলিশ কর্মকর্তা বিজয় বসাক বলেন, ‘স্বাধীনতার আগের ঘটনাগুলো পাকিস্তানিদের অত্যাচার নিপীড়ন আর প্রবঞ্চনার গল্প। পাকিস্তানিরা পদে পদে আমাদেরকে নিপীড়ন করেছে। এই নির্যাতন, নিষ্পেষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন আমাদের জাতির জনক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কৈশোরে সরাসরি সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কৈশোরে তাকে জেলে যেতে হয়েছে। জীবনের ১৪টি বছর তিনি জেলে কাটিয়েছেন শুধু আমাদের মুখে হাসি ফোটাবেন বলে।’

তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম- এই কথাটি বলার মতো সাহস, একজন ব্যক্তির ছিল-তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার একটি হাতের তর্জনী থামিয়ে দিল পাকিস্তানিদের সব গর্জন। বঙ্গবন্ধুর একক নির্দেশনায় ২৬ মার্চ বাঙালি জাতি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করল। ২৫ মার্চের কালরাতের পর সারাদেশের মানুষ একসঙ্গে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠল। আমাদের কাছে অস্ত্র ছিল না। কিন্তু আমাদের কাছে ছিল দেশপ্রেম। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমরা তাদের ভাতে মারব, আমরা তাদের পানিতে মারব। আসলেই আমরা ভাতে-পানিতে মেরেছি।’

শুধু পড়াশোনা দিয়ে একটি জাতি এগিয়ে যেতে পারে না উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তা বিজয় বসাক বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের সঙ্গে সঙ্গে কবিতা, গল্পের বই এসব পড়ার সুযোগ করে দিতে হবে অভিভাবকদেরকে। আমি ভারতে সরকারিভাবে, ব্যক্তিগতভাবে একাধিকবার গিয়েছি। তবে কোনো সময় কলকাতায় যাইনি। কিন্তু বই পড়ে পড়ে আমার একটি কল্পনা আছে। আমি এখন বলে দিতে পারব, কলকাতায় কোন রোড দিয়ে হেঁটে গেলে কোথায় যাওয়া যাবে, কি করা যাবে-সব। বই পড়ে আমি আমার কল্পনার জগতকে বাড়ানোর চেষ্টা করেছি। শুধু পাঠ্যবইয়ের পড়া শিখে হয়তোবা সুন্দর চাকরি করা যাবে। কিন্তু একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা যাবে না।’

পাকিস্তানিদের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলেন জানিয়ে বিজয় বসাক বলেন, ‘শান্তিরক্ষা মিশনে গিয়ে পাকিস্তানের নাগরিকদের কাছে পেলেও তাদের সঙ্গে হাত মেলাইনি। শুধু একজন পাকিস্তানি অফিসারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। কারণ একাত্তরে তাদের সেনারা আমাদের ওপর যে অন্যায় করেছে, সেজন্য তিনি ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন।’

সায়েন্টিস্ট জামাল নজরুল ইসলাম একাডেমির চেয়ারম্যান ছিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) দেবদূত মজুমদার, পাঁচলাইশ মডেল থানার ওসি আবুল কাশেম ভুঁইয়া।

এর আগে সায়েন্টিস্ট জামাল নজরুল ইসলাম একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশু শিক্ষার্থীদের আঁকা ছবিগুলো ঘুরে দেখেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। পরে বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন তারা।

এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।