সুসজ্জিত যে ওভারব্রিজে পা পড়ে না পথচারীর
রাজধানীর গুলশান-বাড্ডা লিংকরোড সংলগ্ন গুদারাঘাটে রয়েছে পরিচ্ছন্ন ও সুসজ্জিত একটি ফুটওভার ব্রিজ। ব্রিজের ওপরে বড় বড় প্লাস্টিকের টবে লাগানো আছে বাহারি ফুলগাছ। যদিও সঠিক পরিচর্যার অভাবে বেশিরভাগ গাছ মরে শুকিয়ে গেছে। ফুটওভার ব্রিজের ওপর স্থাপন করা আছে বাতি। সন্ধ্যার পর পুরো এলাকা যেন আলোয় ঝলমল হয়ে ওঠে।
এত সব ব্যবস্থা থাকার পরও পথচারীর পা পড়ে না এ ওভারব্রিজে। গতকাল রোববার বিকেলে প্রায় দুই ঘণ্টা ফুটওভার ব্রিজটির সামনে অবস্থান করে কাউকে এটি ব্যবহার করতে দেখা যায়নি।
সন্তানের হাত ধরে বিপরীত দিক দিয়ে যাওয়া চলন্ত এক গাড়িকে থামানোর ইঙ্গিত দিয়েই সড়ক পার হয়ে গেলেন শিমুল রহমান। অথচ তার ঠিক পাঁচ-সাত মিটার দূরে ফুটওভার ব্রিজটি। ব্রিজ থাকার পরও কেন বাচ্চা সহকারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হলেন- এমন প্রশ্ন করতেই প্রথমে এড়িয়ে যান তিনি। পরে নিজের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, রাস্তাটা বেশ ফাঁকা, তাই কষ্ট করে ফুটওভার ব্রিজে উঠিনি। আসলে এখানে সবাই সরাসরি রাস্তা পার হন, কেউই ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন না।
‘আমরা অবশ্যই এটা ব্যবহারে বাধ্য হতাম যদি রাস্তার মাঝখানে প্রতিবন্ধকতা থাকত। খোলা রাস্তা, তাই কেউ আর কষ্ট করে এটা ব্যবহার করে না।’
পথচারী জুবায়ের আহমেদও একই কথা বলেন। ‘যেহেতু সড়কটি সবসময় ব্যস্ত থাকে না। তাই সবাই সরাসরি রাস্তা দিয়ে পার হন। এভাবেই সবায় অভ্যস্ত। যে কারণে ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার হয় না। তবে এটা যদি লিংকরোড বা গুলশানে থাকত তাহলে সাধারণ পথচারীদের উপকার হতো। কারণ গুলশান ও লিংকরোডে কোনো ফুটওভার ব্রিজ নেই। যেখানে দরকার সেখানে না দিয়ে অপ্রয়োজনীয় স্থানে এটি স্থাপন করা হয়েছে।
গুলশান-মহাখালী সড়কের তিতুমীর কলেজ সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজটিরও একই অবস্থা। সারাদিনে একজন পথচারী সেটা ব্যবহার করে কিনা- তা নিয়ে সন্দেহ আছে। অথচ যদি এটা মহাখালীর আমতলীতে স্থাপিত হতো তাহলে সিরিয়াল ধরে মানুষ পারাপার হতেন।
গুদারাঘাট সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজটির নিচে এরশাদ আলীর ফলের দোকান। তিনি বলেন, কখনও কোনো পথচারীকে এ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করতে দেখিনি। কারণ, এ সড়কের রাস্তার মাঝে কোনো বেড়া নেই। যে কারণে যত্রতত্র মানুষ রাস্তা পার হচ্ছেন। ফাও ফাও এখানে ফুটওভার ব্রিজ দেয়া হয়েছে।
‘যেখানে দরকার সেখানে ফুটওভার ব্রিজ নেই। আশপাশের এলাকার মধ্যে বাড্ডা লিংকরোড বা হোসেন মার্কেটের সামনে একটি ফুটওভার ব্রিজ খুবই দরকার। কিন্তু সেখানে না দিয়ে অপ্রয়োজনীয় এ স্থানে ফুটওভার ব্রিজটি স্থাপন করা হয়েছে।’
দুই সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে প্রায় ৮৭টি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় ৩২টি এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায় ৪৯টি রয়েছে। রোড অ্যান্ড হাইওয়ের পাঁচটি এবং রাজউকের একটি ফুটওভার ব্রিজ রয়েছে। এছাড়া নির্মাণাধীন এবং নির্মাণের পরিকল্পনায় আছে আরও কয়েকটি ফুটওভার ব্রিজ।
ডিএনসিসির সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুটওভার ব্রিজগুলো দৃষ্টিনন্দনের পাশাপাশি পথচারীদের তা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এছাড়া যেসব ফুটওভার ব্রিজ খুব একটা ব্যবহার হয় না সেগুলো সরিয়ে যেসব স্থানে প্রয়োজন সেখানে স্থানান্তর বা নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এএস/জেডএ/এমএআর/আরএস/জেআইএম