চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন আবরার
বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সু-প্রভাত বাসের চাপায় নিহত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) ছাত্র আবরার আহমেদ। আজ (মঙ্গলবার) বিকেল ৪টার দিকে বনানী কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বাসচাপায় মারা যান আবরার। বিইউপির ছাত্র আবরার মালিবাগে নিজ বাসায় থাকতেন।
এর আগে বেলা দেড়টার দিকে মিরপুর সেনানিবাসের মধ্যে বিইউপি এডিবি গ্রেড গ্রাউন্ড মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ২৫, এডিবি গ্রেড মসজিদের ইমাম মাওলানা তাজুল ইসলাম এতে ইমামতি করেন।
এ সময় আবরার আহমেদের বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফ আহমেদ চৌধুরী, বিইউপির ভিসি মেজর জেনারেল মো. এমদাদ-উল বারী, ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, আবরার আহমেদের সহপাঠী, বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও আত্মীয়-স্বজন জানাজায় অংশ নেন।
পরে দাফনের জন্য আবরারের মরদেহ বনানী কবরস্থানের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।
আবরার নিহতের ঘটনায় রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক গেট এলাকায় রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধে বিমানবন্দর থেকে বাড্ডা হয়ে রামপুরা-গুলিস্তান রুটের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন এবং আগামী তিন মাসের মধ্যে ঘটনাস্থলে একটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সেই আশ্বাস উপেক্ষা করে এখনও সেখানে অবস্থান করছেন।
সু-প্রভাত বাসের চাপায় নিহত বিইউপির ছাত্র আবরার ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ দাবিতে চলা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
বেলা ১১টার দিকে প্রগতি সরণির রোডের নর্দায় দুর্ঘটনাস্থলে মেয়র এলে বিইউপির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী তাৎক্ষণিক লিখিতভাবে ১২ দফা দাবি পেশ করেন। মেয়র ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান শিক্ষার্থীদের। ১২ দফা দাবির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
১. ১০ দিনের মধ্যে সু-প্রভাত বাসের চালক, হেলপার ও মালিকের ফাঁসি।
২. সু-প্রভাত ও জাবালে নূরসহ যেসব বাস আজ এবং এর আগে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে সেসব বাসের রুট পারমিট বাতিল।
৩. বাসচালক ও হেলপারের ডোপ টেস্ট করতে হবে।
৪. বাসসহ গণপরিবহনের চালক ও হেলপারের আইডি কার্ড ভিজিবল করা।
৫. বসুন্ধরা আবাসিক/যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জেব্রা ক্রসিংসহ নিহত আবরারের ফুটওভার ব্রিজ করতে হবে দুই মাসের মধ্যে।
পরবর্তীতে গুছিয়ে আট দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবিগুলো হলো-
১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতি মাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।
২. আটক চালক ও সম্পৃক্ত সকলকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৩. আজ থেকে ফিটনেস বিহীন বাস ও লাইসেন্স বিহীন চালককে দ্রুত সময়ে অপসারণ করতে হবে।
৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সকল স্থানে আন্ডারপাস, স্পিড ব্রেকার এবং ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়ক হত্যার সাথে জড়িত সকলকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৬. দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ী অপসারণ করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রীছাউনি করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং
৮. ছাত্রদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।
গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-অপারেশন) আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘাতক সুপ্রভাত বাস ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫ চালককে আটক করা হয়েছে। চালকের নাম সিরাজুল ইসলাম (২৯)। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা যাচাই-বাছাই চলছে। এ ঘটনায় হেলপার পলাতক রয়েছে।
এমএইচএম/এসআর/জেআইএম