মামলা-জরিমানাতেও ফিরছে না সড়কে শৃঙ্খলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৪৫ পিএম, ১৭ মার্চ ২০১৯
ফাইল ছবি

ট্রাফিক সচেতনতায় অনুষ্ঠিত ট্রাফিক পক্ষ, ট্রাফিক মাস ও ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে মামলা-জরিমানাও। তবুও সড়কে ফিরছে না শৃঙ্খলা। সংশ্লিষ্টরা অমান্য করেই চলেছেন ট্রাফিক আইন।

ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, মামলা ও জরিমানার পাশাপাশি দরকার যাত্রী, চালক, পথচারী ও মালিকদের মধ্যে সচেতনতা, আইন মানা ও ধৈর্য ধরে সড়কে যানবাহন চালানো।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাফিক আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং ক্রমাগত ট্রাফিক শৃঙ্খলা সংক্রান্ত গৃহীত কর্মসূচির ফলে ঢাকার সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলার উন্নতি অনেকটাই দৃশ্যমান। পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রাখতে প্রতিমাসে ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ট্রাফিক সপ্তাহে পুলিশ, বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের সদস্যরা ট্রাফিক সচেতনতা বৃদ্ধি, ট্রাফিক গাইড বুক প্রকাশ ও প্রচার, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা প্রদান, টার্মিনালে সভা-সমাবেশ, সচেতনতামূলক ভিডিও প্রদর্শন, লিফলেট, পোস্টার বিতরণ, পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ, আন্ডারপাস ও জেব্রাক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপারে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মীর রেজাউল আলম বলেন, সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষায় ৫ম বারেরমতো ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করবে ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ। ১৭ মার্চ (রোববার) সকাল থেকে শুরু হয়েছে এই ট্রাফিক সপ্তাহ। চলবে ২৩ মার্চ (শনিবার) পর্যন্ত। ট্রাফিক সপ্তাহে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ সদস্যরা যানবাহনের নিবন্ধন, লাইসেন্স, ফিটনেস, ইনস্যুরেন্সসহ নানা কাগজপত্র ও এসবের মেয়াদ যাচাই-বাছাই করবে।

এর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ৫ থেকে ১৪ আগস্ট ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হয়। এরপর ৫ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর ট্রাফিক সচেতনতা মাস, ২৪ থেকে ৩১ অক্টোবর এবং ২০১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ট্রাফিক শৃঙ্খলা সপ্তাহ পালন করা হয়।

ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ মার্চ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ ৪৫ হাজার ৩৩৮টি মামলা দায়ের করেছে। জরিমানা করা হয়েছে দুই কোটি ১৭ লাখ ৯০০ টাকা। আর ডাম্পিং করা হয় ৫ শতাধিক গাড়ি। এ ছাড়া ৫ হাজারের বেশি গাড়ি রেকার করা হয়।

এর আগে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও শৃঙ্খলা ফেরাতে গত ১৫ জানুয়ারি হতে শুরু হওয়া ট্রাফিক শৃঙ্খলা পক্ষ শেষে ১৯ দিনে মামলা হয় এক লাখ ১২ হাজার ৫৫৮টি এবং জরিমানা করা হয় পাঁচ কোটি ৭১ লাখ ৫৩ হাজার ৬০০ টাকা।

এ ছাড়াও এসময় ৪৭১টি গাড়ি ডাম্পিং ও ১৪ হাজার ১৫৭টি গাড়ি রেকারিং করা হয়।

ঢাকা শহরের গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, মালিক, শ্রমিক সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। গণপরিবহন পরিচালনার জন্য আইন আছে। কিন্তু কেউ মানতে চাই না। সবাই যদি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়, আইন না মানে তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে কিছু করতে পারবে না। গণপরিবহনের শৃঙ্খলা ফেরাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার অনুরোধ জানান তিনি।

সড়ক পরিবহন ও মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, গাড়ির মালিকদের যাত্রীদের জন্য শতভাগ টিকেটের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। চালকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে বেতনভুক্ত করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে গাড়ি চলাচল ও রুট নির্ধারণ করে শৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেষ্টা করা হচ্ছে।

সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, সড়কের বিশৃঙ্খলার জন্য যত্রতত্র রাস্তা পারাপার, রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজ, জেব্রাক্রসিং ব্যবহার না করাটা বহুলাংশে দায়ী। ট্রাফিক পুলিশের দ্বারা যাতে কোনো মালিক, শ্রমিক হয়রানির শিকার না হয় সেটাও দেখতে হবে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব যাত্রীবন্ধু মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, উন্নয়নের নামে যদি সারা বছর রাস্তা কাটাকাটি চলে তবে গণপরিবহন সড়কে চলবে কী করে। এক সড়ক বছরে ২/৩ বার কাটা বন্ধ করে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। তাহলে সড়কে যানবাহন চলাচলে বাধা কমবে। আর মামলা ও জরিমানা করাই শুধু পুলিশের কাজ নয়, সচেতনতামূলক কর্মসূচিও বাড়াতে হবে।

জেইউ/এমবিআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।