বাবা-মায়ের কবরের পাশে কাজী জাফরকে সমাহিত


প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০১৫

বাবা-মায়ের বুকেই ফিরে গেছেন তাদের প্রিয় সন্তান বুলু।কাজী জাফর নামেই রাজনীতির কারণে যিনি দেশ বিদেশে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।চৌদ্দগ্রামের এমপি থেকে শুরু করে দেশের প্রধানমন্ত্রী।কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়েও মৃত্যুর পর রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে পরিবারের আবেদন সত্ত্বেও জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে সমাহিত করার অনুমতি দেয়নি সরকার।

এ নিয়ে গত ৩ দিন প্রাণান্তকর চেষ্টাও ছিল দলীয় নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্খীদের।তবে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও প্রশাসনের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পেয়েছেন সন্মান।

শনিবার বাদ মাগরিব সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মধ্য দিয়ে চির বিদায় দেয়া হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান, বীর মুক্তযোদ্ধা কাজী জাফর আহমেদকে।

ঢাকা ও কুমিল্লায় ৯টি নামাজে জানাজা শেষে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাস্ট্রীয় মর্যাদা, সন্মান প্রদর্শন ও জানাজা শেষে শনিবার বাদ মাগরিব চৌদ্দগ্রামের চিওড়ায় বাবা কাজী আহাম্মদ আলী ও মা তাহেরা খাতুনের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।

এর আগে বিকেল ৫টার দিকে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে চিওড়া সরকারি কলেজ মাঠে প্রয়াত কাজী জাফরের প্রতি রাষ্ট্রীয় সন্মান ও সালাম প্রদর্শন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবময় দেওয়ান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) জাহিদ হোসেন, ওসি আবদুল্লাহ আল মাহফুজ।পরে বাদ মাগরিব অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মেয়ের জামাতা ও আমেরিকা প্রবাসী ভাতিজাসহ অন্যান্যদের অনুরোধে কাজী বাড়ি জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে নবম জানাজা শেষে কাজী জাফরকে বাবা মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।

প্রিয় সন্তানকে চির বিদায় জানাতে চিওড়া সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত স্মরণকালের ওই বৃহৎ জানাজা অনুষ্ঠানে এলাকার সর্বস্তরের লোকজন অংশ নেয়।এতে পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন কাজী জাফরের ভাতিজা কাজী ইকবাল, কাজী নজরুলসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ।

জানাজা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী, আওয়ামী লীগ নেতা আলা উদ্দিন নাছিম, ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলা উদ্দিন, জাতীয় পার্টির একাংশে কেন্দ্রীয় মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিংকন, লুৎফর রহমান হেলাল, খালেকুজ্জামান চৌধুরি, জাফর উল্লা খান লাহরী, এয়ার আহমেদ সেলিম, ভাইস চেয়ারম্যান শরীফ মিয়া, যুগ্ম-মহাসচিব এ.এস.এম শামীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব আবুল কাসেম চেয়ারম্যান, উপজলা জাতীয় পার্টির (জাফর) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ চৌধুরী পাশা, পৌর সভাপতি নজির আহমেদ প্রমুখ।

উপজেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সাবেক সভাপতি খায়েজ আহমেদ ভূইয়া ও সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি জিএম তাহের পলাশী ও সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান মোল্লা হিরণ কাজী জাফরের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এর আগে শনিবার বেলা পৌনে ১২টায় কুমিল্লা ঈদগাহ মাঠে প্রথম জানাজা এবং বেলা সাড়ে ১২টায় সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ২য় এবং দুপুর সোয়া ২টায় চৌদ্দগ্রাম ঈদগাহ মাঠে কাজী জাফরের ৩য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজার আগে মরহুমের বর্ণাঢ্য জীবনের আলোকপাতসহ তার বিদেহি আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির (জাফর) কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, স্থানীয় সাংসদ হাজী আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার, জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা জাপার সভাপতি এয়ার আহমেদ সেলিম, বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল কাদের বাকী, জেলা জামায়াতের আমীর আবদুস সাত্তার প্রমুখ।

অপর দিকে সুয়াগাজী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এম.পি আলহাজ মনিরুল হক চৌধুরী।২টি জানাজা শেষে ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের মরদেহে পুষ্পার্ঘ অর্পন করা হয়।

শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে টঙ্গীর মিল গেইট, বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা, বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম মসজিদ এবং বাদ আছর গুলশান আজাদ মসজিদ প্রাঙ্গনে ৪র্থ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

দেরীতে দাফন প্রসঙ্গে প্রয়াত জাফরের একান্ত সহকারী গোলাম মোস্তফা জানান, স্যারের (কাজী জাফরের) ছোট মেয়ে কাজী রুনা আহমেদ স্বামী-সন্তানসহ আস্ট্রেলিয়া ছিলেন, তিনি শনিবার দুপুরে দেশে আসলেও চৌদ্দগ্রামে আসতে বিলম্ব হয়েছে, তাই দাফনের কাজ বিলম্ব হয়েছে।এছাড়াও সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজী জাফরের দাফন জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করা হলেও গত ৩ দিনেও সরকার ইতিবাচক সাড়া দেয়নি, এতে প্রয়াত জাফরের পরিবার, দলীয় নেতাকর্মী এবং দেশবাসী বিস্মিত হয়েছে বলেও গোলাম মোস্তফা জানান।

বর্তমানে কাজী জাফরের স্ত্রী মমতাজ বেগম, ৩ মেয়ে কাজী জয়া আহমেদ, কাজী সোনিয়া আহমেদ ও কাজী রুনা আহমেদ চৌদ্দগ্রামের চিওড়ায় গ্রামের বাড়িতে রয়েছেন।তারা কাজী জাফরের বিদেহি আত্মার মাগফেরাত কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।  

১৯৩৯ সালের ১লা জুলাই কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কাজী জাফর আহমদ।১৯৮৯-৯০ সালে বাংলাদেশের ৮ম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বর্ষিয়ান এ রাজনীতিক কাজী জাফর আহমদ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম আসন থেকে পরপর ৩ বার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

গত বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় ৭৬ বছর বয়স্ক কাজী জাফর গুলশানের চিওড়া হাউজ নামের বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির পর সকাল সাড়ে ৭টায় ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
 
এমএএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।