‘যারাই মাদক ব্যবসার দুঃসাহস দেখাবে, নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে’
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘এ সপ্তাহে রমনায় এক মাদক ব্যবসায়ীকে পালানোর সময় পায়ে গুলি করে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। তাও আমরা দুবার চিন্তা করিনি। এই মাদককে দমন করতে হবে। প্রয়োজনে এ ধরনের কঠোর ব্যবস্থা আমাদের গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে একটা সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
কমিশনার বলেন, ‘তবে একটা কথা বলি, সত্য কথা, কেউ কিছু মনে করবেন না। পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া আর স্থানীয় জনপ্রতিনিধি-নেতাদের সহযোগিতা ছাড়া মাদক ব্যবসা চলতে পারে না। এটা সত্য কথা।’
রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশান বিভাগের কড়াইল বস্তি-সংলগ্ন এরশাদ স্কুল মাঠে আয়োজিত ‘মাদক ও জঙ্গিবাদবিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য এ কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, গত সপ্তাহে দেখেছেন, এই পুরান ঢাকার বিখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী হযরত আলী, ৩৩টি মাদক মামলার আসামি। গত সপ্তাহে পুলিশের সঙ্গে এনকাউন্টারে নিশ্চিহ্ন হয়েছে, খতম হয়েছে। এরপরও যারা মাদক ব্যবসার দুঃসাহস দেখাবে তাদেরও একই পরিণতি হবে। ছাড় দেয়া হবে না। আমার পুলিশ যদি মাদকের আখড়া থেকে চাঁদা তোলে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যদি মাদকের আখড়া থেকে টাকা তোলে, স্থানীয় নেতারা যদি সুবিধা নেয়, এই মাদক ব্যবসা বন্ধ করা যাবে? যাবে না।’ এ সময় উপস্থিত জনতা সমস্বরে বলে ওঠেন ঠিক ঠিক।
কমিশনার বলেন, ‘আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, যদি কোনো পুলিশের সদস্য, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদককে সহযোগিতা করে, তাকে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখবেন। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা নেই, ওই পুলিশের বিরুদ্ধেও মামলা নিয়ে তাকে হুড় হুড় করে টেনে নিয়ে যাব। ইতোমধ্যে অনেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে তাকে কোর্টে চালান করে দিয়েছি। জিরো টলারেন্স। বাপ হলেও রক্ষা নেই, ছেলে হলেও রক্ষা নেই। মাদক ব্যবসায়ীকে চরমভাবে দমন করা হবে।’
‘সম্মানিত নেতাদের বলতে চাই, আপনারা দল ভারী কিংবা অন্য যে কোনো কারণে হোক, চোরচোট্টা, গুণ্ডা, বদমায়েশ, ছিনতাইকারী বা মাদক ব্যবসায়ীদের ভাতা দেন তাহলে আপনাদেরও আইনের আওতা আনা হবে। কেউ রক্ষা পাবেন না। কাউকে ডরাই না। যে এই ভয়াবহ মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকবে, সে যেই হোক, তার পরিচয় যাই হোক, অবস্থান যেখানেই হোক, তার কোমড়ে রশি দিয়ে বেঁধে হুড় হুড় করে টেনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করব। এটা আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।’
আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, আমরা ওয়াদা করছি ঢাকা মহানগরকে মাদকমুক্ত করব। আমরা ঢাকা মহানগরে আর ঐশী তৈরি হতে দেব না। কারও বাবা যেন না বলে, কমিশনার সাহেব আমার সন্তানকে জেলে দেন। আটকে রাখেন। দোজখের আজাব ওই বাপ ওই মা এই দুনিয়াতেই পেয়ে যায়। মাদকের ব্যবসা করলে নগদ দুটা টাকা হয়তো পাবেন কিন্তু হাজার হাজার সন্তান নষ্ট হয়ে যায়, আপদে পরিণত হয়।’
তিনি বলেন, মাদক সর্বনাশের নাম। মাদক নির্মূল করা পুলিশের একার কাজ নয়। রাজনীতিবিদদেরও একার নয়। এটা সবার দায়িত্ব। আমাদের সন্তানদের রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যদি রক্ষা করতে চাই তাহলে মাদককে দমন ও নির্মূল করতে হবে। যারা মাদক খায়, ব্যবসা করে, চালান আনে, যারা মাদকের জন্য অর্থলগ্নি করে, মাদকের জন্য আশ্রয় দেয় প্রশ্রয় দেয়, কোর্টে গিয়ে জামিন করায়, তাদের সবাইকে রুখতে হবে। তাদের ঘৃণা করতে হবে। সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। থু মারতে হবে। থু মারতে হবে তাদের গায়ে মুখে। কারও রক্ষা নেই।
কমিশনার বলেন, যারা মাদক বহন করে তারা গরিব মানুষ। কিন্তু ব্যবসা করে যারা বড় লোক। আশ্রয় দেয় বড়লোক। প্রভাবশালীর ছত্রচ্ছায়ায় গরিবরা মাদকের ব্যবসা করতে পারে না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মাদকসহ ধরা পড়লে জিজ্ঞাসাবাদ করব। কোর্টে ৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেব, কার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সে মাদকের ব্যবসা করেছে।
এর আগে তিনি ওই এলাকায় ডে কেয়ার সেন্টার ও লাইব্রেরির উদ্বোধন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গুলশান বিভাগের ডিসি মোস্তাক আহমেদসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা।
জেইউ/বিএ/জেআইএম