লিফটটি ছিল ৩৯ বছরের পুরনো

জাহাঙ্গীর আলম
জাহাঙ্গীর আলম জাহাঙ্গীর আলম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৬ পিএম, ০৭ মার্চ ২০১৯

৩৯ বছরের পুরনো লিফট। এর ধারণক্ষমতা ছিল ৮ জনের। কিন্তু এতে ওঠে ১২ জন যাত্রী। এর মধ্যে আইনজীবী, আদালতের কর্মচারী, লিফটম্যান ও কয়েকজন বিচারপ্রার্থী ছিলেন। ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় পাঁচ তলা থেকে ছিঁড়ে পড়ে যায় লিফটি। এতে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন অনেকেই।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পুরাতন ভবনের পাঁচতলা থেকে একটি লিফট ছিঁড়ে পড়ে। লিফটি রশিদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান রক্ষণাবেক্ষণ করত। এর মালিক বজলুর রহমান।

লিফটি ছিঁড়ে পড়ায় আদালত প্রাঙ্গণে বইছে সমালোচনার ঝড়। ২৩ হাজার আইনজীবীর প্র্যাকটিসের জায়গায় কেন থাকবে এত পুরাতন লিফট আর কেনই বা ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী উঠবেন-এটাই এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। আদালতের প্রাঙ্গণে সবার মুখে এখন লিফট ছেঁড়ার গল্প ।

দুর্ঘটনার বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নিওয়াজ মো. তানভীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘লিফটি ১৯৮০ সালের যা ৩৯ বছরের পুরনো। এর ধারণক্ষমতা ৮ জন। আর এতে ওঠে ১২ জন যাত্রী। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় লিফটি ছিঁড়ে পড়ে যায়। আমরা এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। ছিঁড়ে পড়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি রশিদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান মেইনট্যান্স করে। এর মালিক বজলুর রহমান। আমরা এটা আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে তাদের লিজ দিয়েছি। এর সম্পূর্ণ দায়ভার রশিদ এন্টারপ্রাইজের।’

লিফট ছিঁড়ে পড়ায় ক্ষোপ প্রকাশ করেছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সভাপতি গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘লিফটি অনেক পুরাতন ছিল। ২৩ হাজার আইনজীবীর এই আদালতে প্র্যাকটিস করেন। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার বিচারপ্রার্থী এই আদালতে আসেন। আমরা লিফটের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে অনেক বার বলেছি। তারা এ বিষয়ে কোনো প্রদক্ষেপ নেয়নি।’

lead1

তিনি আরও বলেন, ‘যারা লিফট ছিঁড়ে আহত হয়েছেন তাদেরকে বারের (সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি) পক্ষ থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

দুর্ঘটনার কারণ উদঘাটনে কমিটি

লিফট ছিঁড়ে দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ হোলাল চৌধুরী চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক প্রদীপ কুমার রায়কে। সদস্য সচিব যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক উৎপল ভট্টাচার্য। সদস্যরা হলেন সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিট্রেট কাজী আফরাফুজ্জামান ও গণপূর্ত ই/এম বিভাগ-৩ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কাজী মাশফিক আহমেদ। তদন্ত কমিটিকে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ হেলাল চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের জন্য আমরা চার সদস্যর একটি কমিটি গঠন করেছি। ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করবে পুলিশ

লিফটের কোনো দুর্বলতা আছে কিনা বা লিফট ছেঁড়ার পেছনে কী কারণ আছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ মামলা দায়ের করবে বলে জানা গেছে।

এদিকে লিফট ছিঁড়ে পড়ার ঘটনায় জেলা ও দায়রা জজের নাজির কোতোয়ালী থানায় একটি জিডি করেছেন।

পুলিশের লালবাগের ডিভিশনের ডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহিম খান বলেন, ‘লিফট ছিঁড়ে পড়ার কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘লিফট ছিঁড়ে আহত হয়েছেন ১২ জন। এর মধ্যে ৮ জন ঢাকা মেডিকেলে, ৩ জন পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আর একজন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। আহতদের মধ্যে ছয়জন আইনজীবী, একজন কোর্ট স্টাফ ও লিফটম্যান রয়েছেন। বাকিরা বিচারপ্রার্থী ‘

আদালতে সবার মুখে মুখে লিফট ছিঁড়ে পড়ার গল্প

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পুরাতন ভবনের পাঁচতলা থেকে লিফট ছিঁড়ে যাওয়ার কথা এখন সবার মুখে মুখে। সবার মুখে একটাই কথা-কতজন মারা গেল আর কতজনই বা আহত হয়েছে। অনেকের আশঙ্কা আহতরা কি স্বাভাবিক জীবনে আবার ফিরে আসতে পারবেন?

lead3

আবার অনেকে বলছেন, সকালে আমি এই লিফটে উঠেছি। ভাগ্যিস আল্লাহ আমাকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করেছে। কেউ বা বলছেন, ভাঙা-চূড়া লিফট দেখে আমি এক বছর ধরে এতে উঠি না। আবার অনেকে বলছেন, এই ভাঙা-চূড়া লিফটে এতজন উঠার কী দরকার ছিল?

আইনজীবী সাফওয়াত হোসেন বলেন, ‘এই লিফটি অনেক পুরনো। লিফট চলা শুরু করলে শব্দ হয়। আমি ভয়ে এখন এতে উঠি না।’

জাহিদ নামে এক আইনজীবী বলেন, ‘এই পুরনো লিফটে এতজন উঠার কী দরকার ছিল?’

উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার কামরুল হাসান।
আহতদের প্রথমে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও পঙ্গু হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

ঢামেকে ভর্তি আহতের নাম জানা গেছে। তারা হলেন হাজিরা দিতে আসা আসামি সুজন (২২), আইনজীবী সোয়াদ (৩৫), পেশকার সুমন (২৫), আইনজীবী মিঠু (৩৫), লিফটম্যান জাহাঙ্গীর (৫০), আইনজীবী আইয়ুব আলী (৫৮) ও আইনজীবী সুলতান আহমেদ (৩১)।

পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি একজনের নাম জানা গেছে। তিনি হলেন আইনজীবী শামসুন্নাহার। তিনি বাম পায়ে আঘাত পেয়েছেন।

ঢামেকের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের কেউ মাথায়, কেউ ঘাড়ে কেউ কোমরে আঘাত পেয়েছেন।

জেএ/এসআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।