‘দিনে চাকরি রাতে ডাকাতি’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫২ পিএম, ০৪ মার্চ ২০১৯

বেসরকারি অফিসের কর্মী বাপ্পী মুন্সি। গত ১ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোড হয়ে সাইকেলে যাচ্ছিলেন তিনি। পথে হঠাৎ তার সাইকেল থামানো হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাথায় ইটের আঘাত। এরপর কাছে গচ্ছিত কোম্পানির লাখ টাকা ও মোবাইল কেড়ে নেয় ডাকাত দল।

বিষয়টি জানিয়ে র‌্যাব-১ এর কাছে অভিযোগ করেন তিনি। এরপর র‌্যাবের অভিযানে রোববার রাতে র‌্যাব-১ এর স্কোয়াড কমান্ডার (সিপিসি-২) সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি দল দিয়াবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জনকে আটক করে।

আটকরা হলেন- আসলাম আলম স্বাধীন (২৫), আশরাফুল ইসলাম সনি ওরফে বিশু (২৬), রবিন (২৫), শামীম ইসলাম (২২), নাজমুল হাসান (২১), নিজাম উদ্দিন অপু (২৫), মিজানুর রহমান (২৩), তাইমুল ইসলাম (১৯) ও মামুন (১৯)।

dakat

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি বন্দুক, দুই রাউন্ড কার্তুজ, দুটি চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব-১ জানিয়েছে, চক্রের সদস্যরা দিনে ভিন্ন ভিন্ন চাকরি করে। সন্ধ্যা নামতেই একত্রিত হতেন রাজধানীর দিয়াবাড়ী এলাকায়। ১০-১২ জন মিলে ইয়াবা ব্যবসার সিন্ডিকেটের পাশাপাশি গড়ে তোলেন একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দল। এ এলাকায় বেড়াতে আসা কিংবা চলাচলারত লোকদের টার্গেট করে মোবাইল, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিতেন ওই দলের সদস্যরা।

সোমবার (৪ মার্চ) দুপুরে কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে যোগসাজশে দিয়াবাড়ী এলাকায় ডাকাতি চালিয়ে আসছিল। ওই এলাকায় ঘুরতে আসা লোকজনকে সন্ধ্যার পর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব কেড়ে নিতো। এছাড়া ওই রোডে চলাচলরত প্রাইভেটকারকে টার্গেট করতো চক্রটি।

dakat

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চক্রের সদস্যরা ওঁৎ পেতে থাকতো এবং কোনো প্রাইভেট গাড়ি দেখলেই তার গতিরোধ করে রাস্তার কাজ চলছে বা ভাঙা বলে নির্জন রোডে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতো। সেই সড়কে আগে থেকেই ডাকাত দলের অন্য সদস্যরা প্রস্তুত থাকতো।

এছাড়া চলন্ত গাড়ি থামানোর জন্য রশি ও রোড ব্লকার ব্যবহার করতো। কোনো কোনো গাড়ির পেছন থেকে পাথর বা ইট ছুড়ে চালককে গাড়ি থামাতে বাধ্য করতো। কখনো বা গাড়ির সামনের গ্লাসে ডিম ছুড়ে মারতো। ফলে চালক কিছুই দেখতে না পেয়ে গাড়ি থামাতে বাধ্য হতেন। সেই সুযোগে অস্ত্র দিয়ে জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে কখনো বা শারীরিকভাবে নির্যাতন করে সবকিছু লুট করে পালিয়ে যেত চক্রটি।

আটক স্বাধীন এ চক্রের মূলহোতা উল্লেখ করে র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, স্বাধীন ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি ইয়াবার ব্যবসা করতো। গত জুনে ইয়াবাসহ স্বাধীনকে আটক করেছিল পুলিশ। জামিনে বের হয়ে সে আবারও একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনের নেতৃত্বে ১০-১২ জন মিলে সংঘবদ্ধ এ ডাকাত চক্রটি গড়ে তোলে।

চক্রটির সদস্যরা দিনের বেলা ভিন্ন ভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও সন্ধ্যার পর দিয়াবাড়ী এলাকায় ডাকাতি চালিয়ে আসছিল। প্রত্যেকে আলাদা মোবাইল ব্যবহার করতো। প্রত্যেকের মধ্যে ভয়েস মেসেজ চালাচালি করে একত্রিত হতো।

সারওয়ার বিন কাশেম আরও বলেন, দিয়াবাড়ী এলাকায় আরও দুটি ডাকাত দল সক্রিয় বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাদেরও গ্রেফতারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

জেইউ/এনডিএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।