'মানব পাচার রোধে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিকল্প নেই'

কূটনৈতিক প্রতিবেদক কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:২৭ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মানব পাচার সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাওয়া বাংলাদেশিরা নিপীড়নের যে ভয়াবহ বর্ণনা দেন তা মেনে নেয়া কঠিন। শুধু চুনোপুটিদের ধরলেই পাচার রোধ সম্ভব নয়, রাঘববোয়ালদেরও ধরতে হবে।

বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত মানব পাচার বিষয়ক পরামর্শ সভায় তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং ব্র্যাকের যৌথ উদ্যোগে এ সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে পাচারের শিকার ব্যক্তিসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠনে সরকারকে পরামর্শ দেন।

কাজী রিয়াজুল হক বলেন, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। একটি ছাড়া অন্যটি হতে পারে না।

তিনি বলেন, অনেক সময় তথ্য না জানার কারণে মানুষ পাচারের শিকার হয়। অনেকে ভাষা জানে না। যারা বিদেশে যাচ্ছেন তাদের যাওয়ার আগেই যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। বিমানবন্দরে দায়িত্বরত পুলিশকে আরও সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি পাচারের শিকার কাউকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ প্রতিবেদন দেয়ার কাজটি দ্রুত শেষ করতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে প্রয়োজনে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পূর্ণকালীন সদস্য মো. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল গঠন এখন শুধু দাবির পর্যায়ে নেই অনেকটা বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাচারের মতো অপরাধ দমনে সরকারি বেসরকারি সব সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ ক্ষেত্রে সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, বিপদে না পড়লে অনেক সময় মানুষ তথ্য জানায় না। তবে রোহিঙ্গাদের পাচার বন্ধসহ সীমান্ত ব্যবস্থাপনার দিকে সরকার নজর দিচ্ছে। মানব পাচার মামলাগুলো দেখার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে এবং জেলায় জেলায় সমন্বয় কমিটি করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে সব সমস্যার মূলে অভিবাসন ব্যবস্থাপনা ঠিক না হওয়া। বিদেশে কাজ করতে যাওয়া দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় যথেষ্ট দুর্বলতা আছে।

অনুষ্ঠানের আরেক বিশেষ অতিথি ব্র্যাকের জ্যেষ্ঠ পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, মানব পাচার শুধু দেশের নয়, সারা বিশ্বের জন্যই সমস্যা। সবাই মিলে কাজ করলে রাতারাতি না হলেও যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল গঠন হতে পারে কার্যকরী উদ্যোগ।

অনুষ্ঠানের আলোচক ইনসিডিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাসুদ আলী বলেন, এটি কোনো দাবির বিষয় নয়। মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন করতেই হবে। বাংলাদেশ এখন মানব পাচার বিষয়ক প্রতিবেদনের টায়ার-২ ওয়াচলিস্টে আছে। তাই ভয়াবহ বিপর্যয়ের আগেই সমাধান জরুরি।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের পরিচালক কে এ এম মোর্শেদ। অনুষ্ঠানের নির্ধারিত আলোচক মানবাধিকার আইনজীবী সালমা আলী বলেন, জনসচেতনতার বিষয়ে আরও জোর দিতে হবে।

উইনরক ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি লিসবেথ জনিভেল্ড বলেন, মানব পাচার সারা বিশ্বেও একটা সমস্যা। যা একসঙ্গে মিলে সমাধান করতে হবে।

অনুষ্ঠানে মানব পাচার বিষয়ক মূল প্রবন্ধে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ থেকে মানব পাচারের সঙ্গে জড়িতরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। ২০১২ সালে মানব পাচার আইন হওয়ার পর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৭১৬টি মামলা হলেও নিষ্পত্তির ঘটনা খুবই কম। পাচার রোধে যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় গত কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচার প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে টায়ার-২ ওয়াচলিস্টে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি শ্রম অভিবাসনের নামেও পাচার বাড়ছে। মানব পাচার বিষয়ক মামলাগুলোর নিষ্পত্তি করতে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। এজন্য সরকারের নির্ধারিত বাজেট দেয়া উচিত। অন্ততপক্ষে যেসব জেলায় মামলা বেশি এমন পাঁচ জেলায় হলেও সরকার ট্রাইবুন্যাল করুক।

অনুষ্ঠানে সিরিয়ায় পাচার হওয়া এক নারী তার নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

জেপি/এএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।