মৃত্যুর অপেক্ষায় চিড়িয়াখানার ৩৯ প্রাণি
মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ৩৯টি প্রাণি রয়েছে, যাদের বদ্ধ অবস্থায় বেঁচে থাকার সময় অনেক আগেই পার হয়েছে। এখন মৃত্যুও প্রহর গুনছে তারা। এদের বয়স ১৭ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে। কিন্তু বন্যপ্রাণি হত্যা নিষিদ্ধ থাকায় এগুলো মেরে ফেলাও সম্ভব হচ্ছে না।
অতিরিক্ত বয়সের কারণে এসব প্রাণির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগে। এ কারণে এদের পেছনে সরকারি অর্থের একটি বিরাট অংশ ব্যয় ও জনবলকে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বলে চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে।
চিড়িয়াখানা অভ্যন্তরীণ পশু হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হুদা জানান, বর্তমানে ৩৯টি প্রাণি রয়েছে যাদের বদ্ধ অবস্থায় বেঁচে থাকার বয়সসীমা পার হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বেশি বয়সের কারণে এসব প্রাণিদের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন। তবে বয়স পার হয়ে গেলেও এগুলো প্রদর্শনযোগ্য।
চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, অধিক বয়সের প্রাণিগুলো হলো হাতি, গয়াল, ২টি জলহস্তি, ওয়াটারবাগ ইম্পালা, কুমির, সোনালী বুক বানর, অলিভ বেবুন, বাগডাশ, ভোঁদড়, শঙ্খিনী সাপ (৪টি), কোশোয়ারি, সার সক্রেন, লিলফোর্ড সারস (২টি), সাদা পেলিক্যান, মদনটাক (৬টি), রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ভারতীয় সিংহ, চিত্রা হায়েনা, ডোরাকাটা হায়েনা, ২টি ভাল্লুক, ২টি হনুমান, উলু বানর ৩টি।
ভেটেরিনারি চিকিৎসক ও পশু বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃতিকে বেড়ে ওঠাদের চেয়ে আবদ্ধ অবস্থায় প্রাণিদের জীবনী শক্তি কমতে থাকে। ঢাকা চিড়িয়াখানায় বর্তমানে এসব প্রাণিদের প্রকৃত বয়সসীমা অনেক আগেই পার হয়েছে। এদের অধিকাংশেরই আবদ্ধকালীন বয়স ১৫-২০ বছরের মধ্যে। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। পাখিরা ১৫-২০ বছর, হাতি ৬০ বছর, গন্ডার ২০-২৫ বছর, শিম্পাঞ্জি ১৫-১৬, জলহস্তী ২৫-৩০ বছর বাঁচতে পারে আবদ্ধ অবস্থায়।
ঢাকা চিড়িয়াখানার কিউরেটর ডা. এস এম নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, বিশ্বের অন্যান্য দেশের চিড়িয়াখানায় বয়স্ক প্রাণিদের মেরে ফেলা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে চিড়িয়াখানার বয়স্ক প্রাণিদের কী করা হবে, সে বিষয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় এসব প্রাণিকে লালন-পালন করা হচ্ছে। তবে বন্যপ্রাণিদের সংরক্ষণে এদের বিষয়ে বেশকিছু আইন হয়েছে। এ ছাড়া চিড়িয়াখানার জন্য চিড়িয়াখানা আইন করা হচ্ছে। সেখানে এ ধরনের একটি বিধান রাখা হয়েছে। এটি পূর্ণাঙ্গ অনুমোদনের জন্য রয়েছে। এটি পাস হলে চিড়িয়াখানার বয়স্ক এবং প্রদর্শনের অনুপযুক্ত প্রাণীদের যন্ত্রণাহীনভাবে মুত্যৃ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘এখন আমাদের তালিকা অনুযায়ী এসব প্রাণির সংখ্যা ৩৯টি হলেও এদের শারীরিক অবস্থা ভালো। আইন পাসের পরে চিড়িয়াখানা উপদেষ্টা কমিটি যদি মনে করে কোনো প্রাণিকে মেরে ফেলা হবে, তাহলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে নিশ্চিত করা হবে যন্ত্রণাহীন মৃত্যু।’
এমএইচএম/এসআর