শাহজালাল সার কারখানা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ অর্থায়নে ৫ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে নির্মিত দেশের অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান শাহজালাল সার কারখানার নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। নির্মাণের যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং কারখানাটি নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় অর্ধেক টাকাই হরিলুট হয়েছে।
ইতোমধ্যে কারখানাটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে উৎপাদন শুরুর করার আগে প্রকল্পটির বাস্তব অবস্থা অবলোকনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংসদীয় কমিটি। পরিদর্শন শেষে তারা প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা ও অগ্রগতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করবে। এরপরই উৎপাদন শুরুর দিনক্ষণ ঠিক করা হবে।
জাতীয় সংসদ ভবনে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক, হাবিবুর রহমান মোল্লা ও ফাতেমা তুজ্জহুরা অংশ নেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাহজালাল সার কারখানা নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ‘শাহজালাল ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি’ স্থাপনের জন্য ২০১২ বছরের শুরুতে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় ১৫০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়।
এর আগে চীন এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মাণাধীন শাহজালাল সার কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে দুই দেশের মধ্যে ঢাকায় একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনা সরকার এবং চীনের এক্সিম ব্যাংক প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ (৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা) ঋণ সহায়তা প্রদান করে।
ঋণের বার্ষিক সুদের হার দুই শতাংশ ধরা হয়েছে। ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প ব্যয়ের অবশিষ্ট এক হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকার তার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দিচ্ছে।
শাহজালাল সার কারখানাটি চীন ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে নির্মিত হলেও এর প্রযুক্তিগত কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জাপান, আমেরিকা এবং নেদারল্যান্ডস।
কারখানাটি চালু হলে প্রতিদিন ইউরিয়া সার এক হাজার ৭৬০ টন করে বছরে উৎপাদন হবে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন। এছাড়া প্রতিদিন এক হাজার টন হিসেবে বছরে তিন লাখ ৩০ হাজার টন অ্যামোনিয়া উৎপাদন হবে।
এদিকে সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে দেশের সবগুলো চিনিকলকে আধুনিক করে উন্নত মানের চিনি উৎপাদনের মাধ্যমে লোকসান কমানোর সুপারিশ করেছে কমিটি। প্রথম দিকে অন্তত একটি সুগার মিল আধুনিক করে তা মডেল হিসেবে তৈরির সুপারি করা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।
বৈঠকে দেশের সাতটি বিভাগে বিসিক এবং বিটাক প্রতিষ্ঠা করে এর উদ্যোগে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার জন্য সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে আঞ্চলিক অফিসগুলোকে বিকেন্দ্রিকরণের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করারও সুপারিশ করে স্থায়ী কমিটি।
এছাড়া বৈঠকে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) শিল্প নগরীর সমস্যা এবং সমাধান সম্পর্কে করণীয়, কর্ণফুলি পেপার মিল লিমিটেড, চট্রগ্রাম কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের বাংলাদেশ ইনসুলেটর অ্যান্ড স্যানিটারি ওয়্যার ফ্যাক্টরি লিমিটেডের সার্বিক কার্যক্রম, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্টিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এইচএস/এসকেডি/পিআর