বাদলের তথ্য নিতে ভারত যাচ্ছে মানবাধিকার কমিশনের টিম
‘বিনা অপরাধে’ ভারতের কারাগারে প্রায় ১০ বছর বন্দী থাকার পর অবশেষে দেশে ফিরিয়ে আনা বাদল ফরাজির ব্যাপারে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এজন্য আগামী মার্চে মানবাধিকার কমিশনের একটি টিম যাচ্ছে ভারতে। ইতোমধ্যে ভারতের মানবাধিকার কমিশনের সাথে যোগাযোগও শুরু করেছেন কমিশন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহানা সাঈদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার কমিশন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বাদল ফরাজিকে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়ে উদ্যোগ গ্রহণের কথাও জানিয়েছেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে বাদল ফরাজির বিষয়ে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, ‘ভারত আদালতে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ভুল আসামি বাদল ফরাজির ঘটনাটি গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরে কমিশন বাদল ফরাজির জন্য ন্যায়বিচার আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’
ঘটনা তদন্তের উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে কেরানীগঞ্জ কারাগারে বন্দী বাদল ফরাজির সাথে আমরা কথাও বলেছি। আমাদের একটি টিম আগামী মাসে ভারতে যাবে এবং এ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করবে। এ ছাড়াও ভারতের মানবাধিকার কমিশনের সাথে আমরা যোগাযোগ করেছি। সম্মিলিতভাবে বাদল ফরাজিকে সহায়তা করার জন্য।
উল্লেখ্য, বাগেরহাটের আবদুল খালেক ফরাজি ও সারাফালি বেগমের ছেলে বাদল। টি এ ফারুক স্কুলের অষ্টম শ্রেণি পাস বাদলের ইচ্ছা ছিল তাজমহল দেখার। এমন ইচ্ছায় ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই দুপুরে বেনাপোল অভিবাসন কার্যালয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হরিদাসপুর সীমান্তে প্রবেশের পরই সেখানকার একটি খুনের অপরাধে বাদলকে আটক করে দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে না পারার কারণে বিএসএফের কর্মকর্তাদের তিনি বোঝাতেই পারেননি যে খুনের অভিযোগ যে বাদলকে খোঁজা হচ্ছে তিনি সেই ব্যক্তি নন।
২০০৮ সালের ৬ মে দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল ভারতীয় পুলিশ। তাকে ধরতে সীমান্তেও সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। দু’জনের নাম এক হওয়ায় বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজিকে আটক করে বিএসএফ।
পরে ওই খুনের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয় বাদলের বিরুদ্ধে। ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লির সাকেট আদালত বাদলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। দিল্লি হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। পরে বাদল ফরাজির স্থান হয় দিল্লির তিহার জেলে।
বিনা দোষে এই সাজা মেনে না নিয়ে বাদল ফরাজি দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তায় সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করেন। পরে শীর্ষ আদালতও বাদলের আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে জেলেই কাটাতে হয়েছে বাদলকে।
গত বছরের ৬ জুলাই বিকেলে জেট এয়ারের একটি ফ্লাইটে বাদলকে নিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান দেশের প্রতিনিধি দল। এরপর প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে তাকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়া হয়।
জেইউ/এনএফ/জেআইএম