সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পুরোটাই সংরক্ষণের দাবি সংসদে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৫৭ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বাংলাদেশের বহু আন্দোলন-সংগ্রামের স্বাক্ষী, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক সোহরাওায়ার্দী উদ্যানের পুরোটাকেই সংরক্ষণের দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে।

রোববার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এমন দাবি তুলেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

এ সময় ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া সভাপতিত্ব করছিলেন। শেখ সেলিম বলেন, বহুদিন ধরে শুনছি হচ্ছে-হবে, কিন্তু হচ্ছে-হচ্ছে বললে হবে না, কবে হবে তা স্পষ্ট জানাতে হবে। অতিদ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে হবে। বক্তারা ঐতিহাসিক ওই স্থানে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের দাবিও জানান।

সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের যে স্থানটিতে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন এবং যে স্থানটিতে পাকিবাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল, সেই স্থান দুটিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব করেন।

শাজাহান খানের বক্তব্যের রেশ ধরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও দলটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেই সংরক্ষণের দাবি জানান।

কার্যপ্রণালী বিধির ৭১ বিধিতে আনা জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণসংক্রান্ত এক নোটিশের ওপর দেয়া বক্তব্যে সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করে। এই দুটি ঐতিহাসিক স্থানে আজও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ না হওয়ায় জাতি হতাশ।

এ ব্যাপারে তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রীর মনোযোগ আকর্ষণ করেন। শাজাহান খান আরও বলেন, জিয়াউর রহমান এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের একাংশে শিশুপার্ক স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধু-মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মুছে ফেলতে এ কাজটি করেন জিয়া।

৭১ বিধিতে শাজাহান খানের দেয়া এই বক্তব্য ধরে সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে আমরা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এখানে অনেক ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে। এসব ইতিহাস মুছে ফেলতে জিয়া চেষ্টা করেছিলেন, সে জন্য তিনি শিশুপার্ক বানান। বঙ্গবন্ধু যেই স্থানটিতে দাঁড়িয়ে ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন সেই স্থানটিকেও নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছে। আমরা চাই এসব ঐতিহাসিক স্থানও থাকবে, শিশুপার্কও থাকবে। এখানে শিশুরা আসবে, তারা দেশের ইহিতাস জানবে। এখানে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প। ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে এই উদ্যানকে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

পরে এ বিষয়ে শেখ সেলিম বলেন, এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার স্বাক্ষী। শুধু ৭ মার্চের ভাষণ এবং পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণই নয়, এই উদ্যানে বহু ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। সেই কারণে ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে পুরো উদ্যানটিকেই সংরক্ষণ করতে হবে। এই উদ্যান থেকেই বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৬-দফা ঘোষণা করেন। ’৬৯ এর ২৩ ফেব্রুয়ারি এই উদ্যানে ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়া হয়। এই স্থানটিকেও সংরক্ষণ করতে হবে। ’৭০ এর নির্বাচনের পর ১০ জানুয়ারি এই উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ৬-দফার দাড়ি-কমাও বাদ দিলে বাংলার মানুষের মুক্তি আসবে না। এই উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এই উদ্যানে দাঁড়িয়েই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ভারতীয় মিত্রবাহিনীকে ফেরত যেতে হবে। পরে সাড়ে ১৮ হাজার ভারতীয় সদস্য দেশে ফিরে যান।

তিনি বলেন, এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঐতিহাসিক জায়গা। সে জন্য পুরোটাই সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ বংশধররা দেশের ইতিহাস জানতে পারে।

ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফের বক্তব্য সম্পর্কে শেখ সেলিম বলেন, বক্তব্য দিয়ে তিনি চলে গেছেন। শুধু বলছেন হচ্ছে, হবে। হচ্ছে-হচ্ছে বললে হবে না। কবে এই উদ্যান সংরক্ষণের কাজ শেষ হবে তা স্পষ্ট করে বলতে হবে।

শেখ সেলিমের পর তোফায়েল আহমেদ ফ্লোর নিয়ে  উদ্যান। এটাকে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। স্বৈরশাসক জিয়া এই ঐতিহাসিক উদ্যানকে নষ্ট করতেই শিশুপার্ক নির্মাণ করেন। এমনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালবলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটা ঐতিহাসিক জায়গা। অনেক স্মৃতিবিজড়িত এইয়ের যেই বটতলা থেকে আমার বহু আন্দোলন সংগ্রাম করেছি সেই বটগাছটি পর্যন্ত নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে পুরোটা সংরক্ষণ করে স্বাধীনতার স্মৃতিচিহ্ন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের স্থল, পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থানসহ সব ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ করে ভবিষ্যৎ প্রজম্মকে জানানোর আহ্বান জানান।

এইচএস/বিএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।