সন্তানদের বাঁচাতে গিয়ে অঙ্গার মা-মেয়ে
আগুন আগুন চিৎকার শুনেই ধরফরিয়ে উঠেন রহিমা-সুরুজ দম্পতি। বাইরে আগুন দেখে দরজা না খুলে ভেঙে ফেলেন পাশের বেড়া। দৌড়ে পাশের কলোনীতে আসার পর রহিমার মনে পরে আদরের দুই নয়নমনি জাকির (৫) ও নাছরিন (৫) ঘরে রয়ে গেছে। জীবনের মায়া না করে দুই সন্তানকে উদ্ধার করতে জলন্ত ঘরে ঢুকেন রহিমা। মাকে বেরিয়ে আসতে না দেখে বড় মেয়ে নাজমাও (১৮) ঢুকে। কিন্তু ওরা কেউ আর ফিরে আসেনি।
রোববার ভোরে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানার চাক্তাই ভেড়ামার্কেটসংলগ্ন বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এভাবেই একইপরিবারের চারজনসহ আগুনে পুড়ে অঙ্গার অন্তত ৮ জন।
নিহত রহিমার ভাবি সুফিয়া খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগুনের সূত্রপাত আমার দেবরের ঘরের পাশ থেকেই হয়। একেবারে হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই। হঠাৎ আগুন দেখে পাশের বেড়া ভেঙে বড় দুই মেয়ে ও স্ত্রী রহিমাকে নিয়ে বেরিয়ে আসেন সুরুজ ভাই। আমার বাসায় আসার পরই রহিমা আপা তার ছোট দুই সন্তানকে উদ্ধারে আগুনের মধ্যেই ঘরে ছুটে যান। কিন্তু ঘরে ঢুকে আর ফেরার উপায় ছিল না উনার, মা ফিরে না আসায় বড় মেয়েও প্রবেশ করে। এরপর মেঝ মেয়ে নার্গিস (১২) যখন ঘরে প্রবেশ করতে চাইল আমি তাকে বাধা দেয়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি, কিছুই করার ছিল না।’
স্থানীয়রা জানান, সুরুজ মিয়ার দুই সংসার। প্রথম পক্ষের চার সন্তান। পরের পক্ষেরও চার সন্তান। দুই পরিবারই পাশাপাশি থাকতো। মুদির দোকান করে বেশ ভালোই চলছিল তাদের।
আগুন থেকে বেঁচে যাওয়া একমাত্র নার্গিসের মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছিল না। ভয়ার্ত চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছিল। অনেক চেষ্টায় ভাঙা ভাঙা ভাবে সে জানায়, ‘রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম। মাঝরাতে শুনি আগুন আগুন চিৎকার। দরজা খোলা যাচ্ছিল না। তাই বাবা পাশের বেড়া ভেঙে আমাকে, মাকে ও বড় আপুকে বের করে আনে। কিন্তু বাড়ির ভেতরে ছিল আমার দুই ছোট ভাই-বোন জাকির ও নাছরিন। মা তাদের নিয়ে আসতে গিয়ে আর আসেনি।’
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে ৮ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করেছেন জেলা প্রশাসক। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাশহুদুল কবীরকে আহ্বায়ক ও ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আলী আকবরকে সদস্য সচিব করে চার সদস্যের এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নিহতদের প্রাথমিকভাবে দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে সহায়তারও ঘোষণা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
আবু আজাদ/জেএইচ/আরআইপি