আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ শৃঙ্খলাবাহিনী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৩:০৪ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
ছবি-ফাইল

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ জনসম্পৃক্ত শৃঙ্খলা বাহিনী। এ বাহিনীর প্রায় ৫৫ হাজার পুরুষ এবং নারী আনসার সদস্য সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জনসম্পদ রক্ষা ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। দুটি পূর্ণাঙ্গ নারী ব্যাটালিয়নসহ ৪১টি ব্যাটালিয়নের প্রায় ১৭ হাজার সদস্য পার্বত্যঅঞ্চল ও সমতলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত স্ট্রাইকিং ফোর্স দেশের অভ্যন্তরে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

মঙ্গলবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর আনসার-ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৯তম জাতীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

বক্তব্যের শুরুতেই ভাষা আন্দোলনের শহীদ আনসার সদস্য আবদুল জব্বারসহ সকল ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আনসার বাহিনীর সদস্যদের কথাও তিনি স্মরণ করেন। এরপর তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রে প্রায় ৫ লাখ আনসার-ভিডিপি সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্ব পালনের সময় ৫ জন আনসার সদস্য জীবন দিয়েছেন। প্রতি বছর আনসার সদস্যরা দেশের জাতীয় সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবে ব্যাটালিয়ন ও অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তারক্ষা, জঙ্গিবাদ এবং মাদক প্রতিরোধে আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার এই বাহিনীকে ১৯৯৮ সালে সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান করে।’

আনসার-ভিডিপি বাহিনীকে দক্ষ বাহিনী হিসেবে করে গড়ে তুলতে আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিসিএস কর্মকর্তাদের মানোন্নয়ন করা হয়। ২০০০ সালে ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যদের চাকরি স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। ৬৭২ জন নারী আনসারের পদ স্থায়ীকরণ এবং তাদের চাকরিকাল শতভাগ গণনা করার নির্দেশনা জারি করা হয়। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ করা হয়েছে। কক্সবাজারে সম্পূর্ণ নতুন একটি ব্যাটালিয়ন গঠনের কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। ঐতিহাসিক মুজিবনগর নিরাপত্তা রক্ষায় একটি ব্যাটালিয়ন গঠন করা হবে। আনসার সদস্যদের ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ১৫টি মডেল আনসার ব্যাটালিয়ন সদর দফতর নির্মাণ করা হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃত। মাথাপিছু আয় ১৭ দশমিক ৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৮৬ উন্নীত হয়েছে। মাত্র ১০ বছরের শিক্ষার হার ৪৫ থেকে ৭৩ শতাংশ পৌঁছেছে। দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক 8 শতাংশে নেমে এসেছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাচ্ছে, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।’

গত ১০ বছরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সক্ষমতা অর্জন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘দেশে আজ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে চলছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল স্থাপনের কাজ চলছে। এ ছাড়া নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। এ দিক দিয়ে পুরুষ ও নারীর দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪৭তম এবং টানা তিন বছর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে। গত ১০ বছরে আমাদের সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের ফলে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।’

বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে দেশকে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করা বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে জনগণের সঞ্চয় বাড়ানোর বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর। জনগণ যাতে সঞ্চয় বাড়াতে পারে সে লক্ষ্যে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োজিত সদস্যদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য আনসার ভিডিপি ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাংক থেকে সদস্যগণ স্বল্প সুদে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন আয়বর্ধক কাজে নিয়োজিত হতে পারেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি উন্নত সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। তাই আসুন আমরা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলি।’

সফিপুর আনসার একাডেমির ইয়াদ আলী প্যারেড গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৯তম জাতীয় সমাবেশের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের সালাম নেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বাহিনীর মহাপরিচালক কাজী শরীফ কায়কোবাদ। প্যারেড পরিচালনা করেন প্যারেড কমান্ডার আইয়ুব আলী। এ সময়ে খোলা জিপে প্যারেড গ্রাউন্ড পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে তিনি আনসার সদস্যদের নিয়ে একটি কেক কাটেন এবং তাদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। পরে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের তৈরি বিভিন্ন হস্তশিল্পের স্টল ঘুরে দেখেন। এর আগে অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজের পর কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে আনসার সদস্যদের পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজ, গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, সাংসদ মেহের আফরোজ চুমকি, কালিয়াকৈর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্দুল ওহাব মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ কবীর প্রমুখ। এ ছাড়া তিন বাহিনীর প্রদান, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিরা উপস্থিত ছিলেন।

মো. আমিনুল ইসলাম/এসআর/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।