চাকরির সন্ধানে ঢাকায় এসে খুন : তিন বছর পর রহস্য উদঘাটন
রাজধানীর কদমতলী এলাকায় ২০১৫ সালের ১১ অক্টোবর সংঘঠিত ক্লু-লেস রাসেল (২২) হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। রাসেল হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামি সজল ওরফে পিচ্চি সজল (২২) ও মো. হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবুকে (২৫) গ্রেফতারের পর এ তথ্য জানিয়েছে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর)।
গ্রেফতার সজল বাগেরহাটের মোরলগঞ্জের আমতলী এলাকার কামাল হোসেনের ছেলে ও হুন্ডা বাবু ডিএমপির শ্যামপুর থানাধীন ফরিদাবাদ এলাকার হাজীগেট ব্যাংক কলোনির মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, রাসেল তার গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজ করতেন। মায়ের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ২০১৫ সালের গত ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় আসেন চাকরির সন্ধানে। দু’দিন পর রাত ১১টায় রাসেলের মা মোবাইল ফোনে জানতে পারেন রাসেল খুন হয়েছেন এবং তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
ঢাকায় আসার পর মা স্থানীয় সূত্রে জানতে পারেন, ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর কদমতলী থানাধীন বড়ইতলা মোড়ে অজ্ঞাতদের ছুরিকাঘাতে রাসেল মারা গেছেন। কদমতলী থানা পুলিশ সুরতহাল শেষে মরদেহ মর্গে পাঠায়।
ওই ঘটনায় মা রাশিলা বেগম (৪০) অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে কদমতলী থানার একটি মামলা দায়ের করেন, মামলা নং-১৯।
কদমতলী থানা পুলিশ তদন্ত শেষে ঘটনাটি পেনাল কোডের ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হইলেও কে বা কারা জড়িত তা উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে ২০১৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। তবে খুনের রহস্য উদঘাটিত না হওয়ায় চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে ভিকটিমের মা আদালতে না রাজির আবেদন করেন। পরে আদালতের আদেশে পিবিআই, ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) এসআই আল-আমিন শেখ মামলাটির তদন্ত শুরু করেন।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে ক্লু-লেস রাসেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ব্যাপক তদন্ত শুরু করে এসআই আল আমিন। গত ৯ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার আমতলী এলাকা থেকে সজল ওরফে পিচ্চি সজলকে আটক করে, পরে তার দেয়া তথ্যে ওইদিন রাতে রাসেল হত্যায় জড়িত আরেক আসামি হোসেন বাবু ওরফে হুন্ডা বাবুকে শ্যামপুর থানাধীন হাজীগেট ব্যাংক কলোনী হতে গ্রেফতার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআই জানতে পারে, নিহত রাসেলের বাড়ি খুলনা জেলার রূপসা থানা এলাকায়। গ্রেফতার সজলও একই গ্রামে বিয়ে করে। সেই সুবাদে উভয়ের মধ্যে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সজল বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি হওয়ায় প্রায়ই রাসেলের বাসায় রাত্রীযাপন করত। রাসেলকে সজল টায়ারের ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেয়ার কথা বলে ঢাকায় নিয়ে আসে। তবে চাকরি দিতে না পারায় তাদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়।
পিচ্চি সজলের পরিচিত পিংকি ও পারভেজ কদমতলী-শ্যামপুর থানা এলাকার মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী। পিংকি ও পারভেজের মধ্যে এলাকার মাদক ব্যবসার প্রভাব বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলছিল। বিরোধের জের ধরে মাদক সম্রাজ্ঞী পিংকি পারভেজকে খুন করার জন্য বাবু ওরফে হুন্ডা বাবু ও পিচ্ছি সজলদের ভাড়া করে। পারভেজকে খুন করার উদ্দেশ্যে সু-কৌশলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ২০১৫ সালের ১০ অক্টোবর রাতে পিচ্ছি সজল, হুন্ডা বাবু, জুয়েল, আল-আমিন একত্রিত হয় কদমতলী থানাধীন বড়ইতলা মোড়ে।
মনোমালিন্যের শোধ নিতে সেখানে পিচ্ছি সজল কৌশলে রাসেলকেও নিয়ে আসে। পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী ইয়াবা সেবন শেষে চাকু দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে পারভেজ ও রাসেলকে আঘাত করে পিচ্ছি সজল, হুন্ডা বাবু, জুয়েল, আল-আমিন পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর অবস্থায় পারভেজ ও রাসেল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে রাসেল মারা যায়।
আটক পিচ্চি সজল ও হুন্ডা বাবুর বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি, হত্যা চেষ্টা ও অস্ত্রসহ একাধিক মামলা রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত অন্য সহযোগী আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানানো হয়।
জেইউ/আরএস/পিআর