বাংলাদেশকে আলোকিত হতেই হবে : আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:২৪ এএম, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, ‘৪০ বছর আগে আমাদের স্বপ্নের জায়গা ছিল- সারাদেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আমরা আলো পৌঁছে দিতে চাই। সেই জন্য তারা যদি নিজে আসে তো খুব ভালো। আর যদি না আসে আমরা তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আলো দিয়ে আসব। কিন্তু বাংলাদেশকে আলোকিত হতেই হবে।’

শুক্রবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ৪০ বছর পূর্তি উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘একটা কুঁড়িকে দেখে যেমন পুরো প্রস্ফূটিত ফুলকে ভাবা খুবই কঠিন, তেমনি ৪০ বছর আগে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শুরুটা হয়েছিল, কুঁড়িটা হয়েছিল। কিন্তু এভাবে এত বড় হবে এটা আমরা ভাবিনি। এটা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এটা (বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র) আরও বড় হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তখন (৪০ বছর আগে) একবার লিখেছিলাম যে একদিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাংলাদেশ হবে। এটা শুনে সবাই তখন মুখ টিপে হেসেছিল। তারা ভেবেছিল আমি এতে বুঝাচ্ছি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইট-কাঠ সব বাংলাদেশ হবে। কিন্তু সেটা নয়। আমি বলতে চেয়েছিলাম- আমরা যে আজকে আলোকিত মানুষের স্বপ্ন দেখেছি, উন্নত মানুষের স্বপ্ন দেখেছি, একদিন সারা জাতিকে সেই স্বপ্ন দেখতে হবে।’

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি বলেন, আমাদের একটা বড় জাতি চাই, একটা গৌরবময় জাতি চাই, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি চাই। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে।

bsk

আলোকিত মানুষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্নদ্রষ্টা আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের হাত ধরেই সত্তর দশকের শেষের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। হাটি হাটি পা পা করে ৪০ বছর পূর্ণ হয়েছে তার। সংগঠনটির ৪০ বছর পূর্তির আয়োজন ছিল বর্ণাঢ্য।

শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় রাজধানীর পাবলিক লাইব্রেরির সামনে থেকে শুরু হয় এক বৈচিত্রপূর্ণ র্যালি। তাশের দেশের রাজার পোশাক পরে র্যালির নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। সঙ্গে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি, প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মোস্তফা মনোয়ার, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, শিল্পী মোস্তাফা জামান আব্বাসী, টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, নাট্যভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, টিভি ব্যক্তিত্ব আবদুন নূর তুষার প্রমুখ।

কার্নিভ্যাল ঢঙে বর্ণিল, মনোজ্ঞ ও সুসজ্জিত র্যালিটি সাজানো হয় ১৮টি ভাগে। র্যালির দ্বিতীয় ধাপে রঙিন শাড়িতে সজ্জিত ছিল ৩২ জন মেয়েশিশু। অন্যান্য ভাগগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল- ঢাক বাদক দল, ভরত নাট্যম, কথক, মণিপুরী এবং গৌড়ীয় নাচের দল, রংধনুর আদলে সাতটি রঙে সজ্জিত শিশুর দল, রঙিন শাড়ি পরে কলস কাকে মেয়েদের দল, মুুক্তযোদ্ধার দল, রোমান বাদক দলের সঙ্গে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিদের সাজে সজ্জিত দল, শিশুতোষ গল্পের চরিত্রে সজ্জিত দল, রঙিন পতাকা হাতে মানুষ এবং সুসজ্জিত মোবাইল লাইব্রেরি।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল র্যালির নবম ভাগ। এ ভাগে ছিল বিশ্বসাহিত্য ও বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত সব চরিত্র। চরিত্রগুলো দেখে মনে হচ্ছিল সত্যি সত্যিই র্যালিতে হাঁটছেন সফোক্লিস, সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, ফ্রয়েড, মহাকবি ফেরদৌসী, রুমী, মহাকবি গ্যাটে, শেখ সাদী, হাফিজ। আরও ছিলেন গৌতম বুদ্ধ, কনফুসিয়াস, হেগেল, ডারউইন, নিউটন, গ্যালিলিও, আর্কিমিডিসসহ আরও অনেকে। জোয়ান অব আর্ককেও দেখা গেছে র্যালিতে।

বাংলা সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখকদের মধ্যে ছিলেন- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বেগম রোকেয়া ও কাজী নজরুল ইসলাম।

র্যালির চৌদ্দতম ভাগে ছিল বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যের জনপ্রিয় রূপকথার বেশ কয়েকটি চরিত্র। এতে ছিল- হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা, পিনোকিও, অরুন-বরুন-কিরণমালা, সিনড্রেলা, আলাদিনের জ্বিন, এমনকি শিয়াল পণ্ডিতও।

bsk

অন্যদিকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের অডিটরিয়ামে সারাদিন ব্যাপী চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে কণ্ঠশিল্পী কিরণ চন্দ্র রায়, প্রিয়াংকা গোপ, চন্দনা মজুমদারসহ প্রায় ৫০ জন শিল্পী অংশ নেন। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে গৌড়ীয়, মণিপুরী, কথকসহ বিভিন্ন ধরনের নাচ, ফাঁকে ফাঁকে চলে আলোচনা-স্মৃতিচারণও।

উৎসব আয়োজনে প্রায় ৩০ হাজার অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের আপ্যায়নের জন্য বাঙালিয়ানা ধাঁচে পরিবেশন করা হয় দেশীয় সব খাবার। আকর্ষণীয় বাঁশের ঝুড়িতে করে অতিথিদের হাতে তুলে দেয়া হয় পাটিশাপটা, তেলের পিঠা, কদমা, খই, চিড়ার মোয়া, নিমকপাড়া, মুড়ালী, নকুল দানা, দানাদার, গজা, জিলিপিসহ আরও কিছু খাবার।

এদিকে চল্লিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে কেন্দ্রকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। উৎসব উপলক্ষে চারুশিল্পী মিলন রায়ের নেতৃত্বে একঝাঁক স্বেচ্ছাসেবী শিল্পী মাসব্যাপী কেন্দ্রকে সাজিয়ে তোলে মনোমুগ্ধকর রূপে। ওয়াল পেইন্টিং, ক্যানভাস, আলপনায় বর্ণিল করে তোলা হয় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। প্রবেশদ্বারে চমৎকার একটি তোরণ। তোরণ দিয়ে ঢুকতেই হাতের দু’পাশের দেয়ালে চোখে পড়বে নানান চিত্রকর্ম। এতে ফোক এবং রুপকথার বিভিন্ন চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

আরেকটি টিম শিল্পী আব্দুর রহমান নূর ও স্থপতি সাইয়েদা শারমিন সেতুর নেতৃত্বে কেন্দ্রের পুরাতন বিল্ডিংয়ের রেপ্লিকাসহ নানান রকম কারুশিল্পে সাজিয়ে তোলে উৎসবস্থল। এতে ব্যবহার করা হয় কাগজের ফুল, পমপম, মাটির হাড়ি, মটকি, সরা, মঙ্গল প্রদীপসহ লোকজ সব উপকরণ। এ ছাড়াও সন্ধ্যার পর ঝলমলে আলোকসজ্জায় দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে কেন্দ্র।
আর সবুজায়নের জন্য ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে ফ্লোরে টবে শোভা পায় নানান প্রজাতির গাছ।

অনুষ্ঠানটি সাফল্যমণ্ডিত করতে জন্য প্রায় ৫০০ জন স্বেচ্ছাসেবক দিনব্যাপী কর্মব্যস্ত ছিল। এ ছাড়াও উৎসব উদ্যাপন কমিটি এবং বিভিন্ন উপকমিটির সদস্যরা প্রায় দুইমাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।

এমবিআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।