কর্ণফুলীতে উচ্ছেদ : লবণ শিল্পের ক্ষতি শত কোটি টাকা

আবু আজাদ
আবু আজাদ আবু আজাদ , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০২:১৫ এএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

কর্ণফুলী নদীর তীরে বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চলেছে। গত তিন দিনের ধারাবাহিকতায় এদিনও দেশের সবচেয়ে বড় ‘লবণের মোকাম’ মাঝির ঘাটে ভাঙা পড়েছে বেশ কয়েকটি লবণ মিল ও গুদাম। লবণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ উচ্ছেদ অভিযানে তাদের ক্ষতির পরিমাণ শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পতেঙ্গার সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সকাল থেকে নতুন আরও ২০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত চার দিনে অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে সাত একর জায়গা।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, নদীপাড়ের লোহারঘাট, আনু মাঝির ঘাট, ও এভারগ্রিন ঘাটে থাকা অন্তত ১০টি লবণ মিল ও গুদাম গুড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসনের উচ্ছেদকারী দল। গত কয়েকদিন ছোট মেশিন দিয়ে কাজ চললেও এদিন লম্বা স্ক্যাবেটরসহ ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়।

চট্টগ্রাম লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি হাজী কবির জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা গত ৩০ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছি। কোটি কোটি টাকা বাজারে খাটিয়েছি। যারা লবণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের কেউ এখানে ভূমি মালিক নয়। সবাই ভাড়ায় এই মিলগুলো চালাত। কিন্তু হঠাৎ ভাঙার মুখে পড়ে আমাদের এক-একজনের ক্ষতি দুই থেকে তিন কোটি টাকা। অথচ অবৈধভাবে যারা দখল করে যারা আমাদের থেকে এতদিন ভাড়া নিয়েছে তাদের আজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০টি লবণ মিল ভাঙা পড়েছে। এতে প্রায় শত কোটি টাকার লোকশান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।’

ctg

এ বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়টি নজরে আনা হলে চট্টগ্রাম লবণ মিল মালিক সমিতির এ কর্তাব্যক্তি বলেন, ‘২০১৫ সালে যে সার্ভে হয়েছিল তার খুঁটি এখনো পোঁতা আছে। কিন্তু এখন প্রতিদিন নতুন নতুন দাগ দিয়ে ভাঙা হচ্ছে। আপনি দেখেন মাত্র গতকাল নতুন দাগ দিয়ে আজ লবণ মিলগুলো ভাঙছে। যা আগের দাগে ভাঙার বাইরে ছিল।’

চট্টগ্রাম লবণ মিল মালিক সমিতির নির্বাহী সদস্য মো. বখতিয়ার জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে পটিয়ার ইন্দ্রপুর ও এই মাঝির ঘাট হলো লবণের আড়ত। মাঝির ঘাটে বাংলাদেশে লবণ তৈরি করে বাজারজাত করে এমন সব কোম্পানির মিল রয়েছে। নারিকেলতলা থেকে মাঝির ঘাটের পুরোটা জুড়ে লবণ মিল ছিল ৯০টির মতো। গত দুই দিনে প্রায় ৭০টি লবণ মিল ভাঙা পড়েছে। এর মধ্যে দেশে সেরা দাদা, জননী, পপুলার ব্র্যান্ডেরও লবণ মিল রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, যে দিন ভাঙা শুরু হয় তার আগে ছিল বন্ধের দিন (শুক্রবার-শনিবার)। তাই কেউ মোকামে ছিল না। সোমবার ভাঙা শুরু হওয়ার পর কেউ তেমন কিছু সরাতে পারেনি।

ক্ষতিগ্রস্ত লবণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের প্রত্যেকের পুঁজি ছিল অন্তত দুই কোটি টাকা। যার মধ্যে বাজারে বাকি আছে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা করে। এখন মিল ভেঙে যাওয়ায় সেই বাকি টাকা পাওয়া নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন।

জননী সল্টের মালিক হাজী আমির আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি বড় ব্যবসায়ীদের কাছে দুই কোটি টাকার ওপরে পাওনা আছি। আবার আমার থেকে কক্সবাজারের চাষিরা পাওনা আছে ৭০-৮০ লাখ টাকা, টাকা পাবে নৌকার মাঝি, টাকা পাবে শ্রমিকরা। এখন এ অবস্থায় কে কাকে টাকা দেবে?’

ctg

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক, আরও কয়েক হাজার নৌকার মাঝি। তারা এখন সবাই বেকার। যারা দিনে কাজ করে সংসার চালাত তারা এখন মাথাগোঁজার ঠাঁই হারিয়ে, চাকরি হারিয়ে ভবঘুরের মতো হয়ে গেছে।’

চট্টগ্রাম লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি হাজী কবির সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘চট্টগ্রামের লবণ শিল্পের এ ক্ষতির প্রভাব সারা দেশে পড়বে। সরকার রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করেছে, ট্যানারি শিল্প স্থানন্তরের সুযোগ দিয়েছে। তাই আমরা চাই চট্টগ্রামের লবণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার শ্রমিক শত শত মালিককে পুনর্বাসন করা হোক।’

এদিকে অভিযানে অংশ নেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভাঙা যেহেতু হচ্ছে ক্ষতি হবে সেটাই স্বাভাবিক। কর্ণফুলীর তীর উচ্ছেদ যে শুরু হচ্ছে তা চট্টগ্রামের সবাই জানে। এটি অনেক আগের মামলা। ২০১৬ সালের ১৮ জুন আরএস ও বিএস রেকর্ড অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর বর্তমান অবস্থান ও দখলদারদের চিহ্নিত করে একটি তালিকা তৈরি করা হয়। সেই তালিকা ধরে উচ্ছেদ অভিযান চলছে।’

‘নতুন দাগ দেয়ার অভিযোগটি সত্য নয়, বরং দখলদাররা আমাদের দেয়া চিহ্ন মুছে ফেলার কারণে তা আবার চিহ্নিত করা হয়েছে। যে যত প্রভাবশালী হোক উচ্ছেদ অভিযান চলবে,’- যোগ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম।

আবু আজাদ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।