শহর পরিষ্কারে একা এক সাহসী সৈনিক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১১:০২ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাজধানীর ফার্মগেট পুলিশ বক্সের সামনে শত শত যাত্রী বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। যেকোন বাস এখানে এসে দাঁড়ালেই ঠ্যালাঠেলি করে বাসে উঠছেন যাত্রীরা। এমন সময় খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের দিকে এগিয়ে আসলেন এক বৃদ্ধ ব্যক্তি। এসেই আপন মনে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। সবার চোখে আগ্রহের দৃষ্টি তখন ওই বৃদ্ধের দিকেই।

তিনি কারো দিকে না তাকিয়ে, কারো কথা না শুনে দেয়ালে,বিদ্যুৎতের খুঁটিতে যেসব পোস্টার লাগানো আছে সেগুলো তুলে ফেলতে শুরু করেছেন। পোস্টার তুলে তুলে তিনি নিচে জমা করছেন।

পোস্টার তুলছেন কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব পোস্টার লাগিয়ে যারা শহরকে অপরিচ্ছন্ন করছে, সৌন্দর্য নষ্ট করছে তারা দেশের শত্রু। ১২ বছর যাবৎ আমি নিজ উদ্যোগে এসব পরিষ্কার করছি। আজীবন করে যাবো।

poster

আপনাকে কেউ এসব পরিষ্কার করতে বলেছেন না নিজেই করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে কেউ করতে বলেনি। আমি নিজ উদ্যোগেই এটা করছি, এটা আল্লাহর রহমত, দয়া। শহরের সৌন্দর্য ঠিক রাখতে, পরিচ্ছন্ন করতে আজীবন আমি এটা করে যাবো। কেউ বাধা দিলেও আমি শুনি না। আমি এসব পোস্টার তুলে ফেলি।

এই বৃদ্ধ জানালেন তার নাম আবুল খায়ের। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে। থাকেন ফুলবাড়িয়া ‘হুজুরে’র দরবারে। আর কোন কথা না বলে সামনের দিকে হাঁটা ধরলেন, কিছুটা এগিয়ে গিয়ে আবারও আরেকটি দেয়ালের পোস্টার তুলতে শুরু করলেন।

poster

ওই এলাকায় একটি চায়ের দোকানে চা খেতে আসা হাবিবুর রহমান নামে একজন বললেন, কাজের জন্য আমি প্রতিদিন এখানে আসি। দীর্ঘ দিন ধরে দেখছি এই বৃদ্ধ লোকটি এভাবেই পোস্টার তোলেন প্রতিদিন। দুই-একবার উনার সঙ্গে কথাও বলেছি। আসলে উনি কিছুটা ‘মানসিক ভারসম্যহীন মানুষ’। কিন্তু নিজ উদ্যেগে শহরটাকে পরিচ্ছন্ন করতে এভাবেই প্রতিদিন পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলেন। আসলেই তার এই উদ্যোগ সম্মান করার মতো।

রাজধানীর প্রায় প্রতিটি দেয়ালেই নানা বিজ্ঞাপন, পোস্টার,বিজ্ঞপ্তি আর ব্যানারের ছড়াছড়ি। বড় সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি, ওভার ব্রিজের পিলার, গাছপালা, ল্যাম্পপোস্ট সব জায়গাতেই একই দশা। এর ফলে নষ্ট হচ্ছে রাজধানীর মৌলিক সৌন্দর্য। এরইমধ্যে এই বৃদ্ধের ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন সাধারণ মানুষ।

এএস/এনএফ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।