বিনা দোষে জাহালমের কারাভোগ : দুদকের তদন্ত কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৩৭ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

বিনা দোষে ও ভুল তদন্তের স্বীকার পাটকল শ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাবরণের ঘটনা তদন্তে গাফিলতি ছিল কিনা অনুসন্ধানের জন্য কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সোমবার দুপুরে দুদক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

তিনি বলেন, ‘জাহালমের ঘটনায় দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের যদি কোনো গাফিলতি থেকে থাকে, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ জন্য আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছি।’

দুদকের পরিচালক (লিগ্যাল) আবুল হাসনাত মো. আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে সার্বিক দিক তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। এরপর সালেককে তলব করে দুদক চিঠি দিলে সেই চিঠি পৌঁছায় জাহালমের টাঙ্গাইলের বাড়ির ঠিকানায়।

নরসিংদীর ঘোড়াশালের বাংলাদেশ জুট মিল শ্রমিক জাহালম তখন দুদকে গিয়ে বলেন, তিনি আবু সালেক নন, সোনালী ব্যাংকে তার কোনো অ্যাকাউন্টও নেই। ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবু সালেকের যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে সেটাও তার নয়।

কিন্তু দুদকে উপস্থিত বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা সেদিন জাহালমকেই ‘আবু সালেক’হিসেবে শনাক্ত করেন। পরে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘোড়াশাল থেকে জাহালমকে গ্রেফতার করে দুদক।

পরে আদালতেও জাহালম দুদকের পরিচয় বিভ্রাটের বিষয়টি তুলে ধরে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। কিন্তু কেউ তার কথা কানে তোলেনি।

কারও কাছে সমাধান না পেয়ে জাহালমের বড় ভাই শাহানূর মিয়া ২০১৮ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে যান। তার আবেদনে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে জাহালমের সঙ্গে কথা বলেন কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

পরে মানবাধিকার কমিশনের তদন্তে বেরিয়ে আসে, আবু সালেক আর জাহালম এক ব্যক্তি নন।

এ নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি প্রথম আলোয় ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গটিত বেঞ্চ জাহালমকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে তাৎক্ষণিক মুক্তির আদেশ দেন।

আদেশের আগে এক পর্যায়ে বিচারক বলেন, ‘দুদক যদি প্রোপারলি কাজ না করে তাহলে আমাদের যে উন্নয়ন হচ্ছে তার স্থায়ীত্ব থাকবে না। দেশ পাকিস্তান হতে বেশি সময় লাগবে না, এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের ভিক্ষা করতে বসতে হবে।’

হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে এক মিনিটের জন্যও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা না। এ ভুল তদন্তে দুদকের কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কিনা, সিন্ডিকেট থাকলে কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা চিহ্নিত করে আদালতকে জানাতে হবে। না হলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে।’

এ মামলায় যে তদন্তকারীরা জাহালমের নামে ভুল অভিযোগপত্র দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধ দুদক কী ব্যবস্থা নিয়েছে তাও জানতে চান আদালত।

যে ৩৩ মামলায় জাহালমকে কারাগারে রাখা হয়েছিল, তার মধ্যে ২৬টিতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল দুদক। এসব মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন দুদকের ৯ জন কর্মকর্তা।

আদালতের আদেশে রোববার মধ্যরাত ১টার দিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জাহালম কারাগারের সামনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো অপরাধ না করেও দুদক আমাকে মিথ্যা মামলায় তিন বছর কারাগারে আটকে রেখেছে; আমি দুদকের কঠিন বিচার চাই।’

এফএইচ/এনডিএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।